নয়াদিল্লি: ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমানে চেপে আকাশে উড়ান। ৩০ মিনিট চক্কর দেওয়ার পর ফের মাটিতে অবতরণ। বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই হলেও, আত্মবিশ্বাসে কোনও ঘাটতি ছিল না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। তবে অম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আর একজনও সকলের নজর কেড়েছেন। তিনি আর কেউ নন, ভারতে ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমানের একমাত্র মহিলা পাইলট, স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিংহ। বুধবার রাষ্ট্রপতি মুর্মু পাশে স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গীর সহাস্য এই মুহূর্তে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন এই তাঁকে বন্দি করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল পাকিস্তান। (Squadron Leader Shivangi Singh)

Continues below advertisement

ভারতীয় বায়ুসেনার গোল্ডেন অ্যারোজ স্কোয়াড্রনের সদস্য স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী। দেশের  প্রথম এবং একমাত্র মহিলা ‘রাফাল’-পাইলট তিনি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান থেকেই পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। শিবাঙ্গীও ওই অভিযানে যুক্ত ছিলেন। তিনিও ‘রাফাল’ উড়িয়েছিলেন সেই সময়। সেই সময় তাঁকে বন্দি করা হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান। (Droupadi Murmu)

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে যখন গোটা দেশের আবেগ তুঙ্গে, সেই সময় সোশ্য়াল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তান থেকে। ভারতের একটি ‘রাফাল’ বিমান সিয়ালকোটে ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করা হয়। এক মহিলা পাইলটের ছবিও পোস্ট করা হয়। দাবি করা হয়, ওই মহিলা পাইলটের নাম শিবাঙ্গী সিংহ। বিমান ভেঙে পড়লেও, তিনি প্রাণে বেঁছে গিয়েছেন। পাক সেনা তাঁকে বন্দি করেছে।

Continues below advertisement

যদিও ওই দাবি ধোপে টেকেনি। কারণ ছবি মিলিয়ে দেখা যায়, যে মহিলা পাইলটের ছবি পোস্ট করে শিবাঙ্গী সিংহ বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আসলে চিফ ট্রেনার ভূমিকা। কর্নাটকে প্রশিক্ষণ চলার সময় যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়লেও বেঁচে ফিরে আসেন ভূমিকা ও উইং কমান্ডার তেজপাল। অল্পবিস্তর চোট পেয়েছিলেন তাঁরা। ফলে স্কোয়াড্রন শিবাঙ্গী পাকিস্তানের হাতে বন্দি হয়েছেন বলে যে দাবি সামনে আসে, তা বিশ্বাসযোগ্য ঠেকেনি। 

সেই সময় আরও একটি বিকৃত ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায়, যেখানে বায়ুসেনা প্রধান মার্শাল এপি সিংহ শিবাঙ্গী নিখোঁজ বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন, এমন যুক্তি খাড়া করা হয়। সেই সময়ই কেন্দ্রীয় সরকার ওই মিথ্যা দাবি খারিজ করে দেয়। PIB-র তরফে সত্যতা যাচাই করে ভিডিওটি-কে ভুয়ো বলে চিহ্নিত করা হয়। এতদিন পর রাষ্ট্রপতি মুর্মুর পাশে স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গীর দেখা পাওয়ার পর সরকারি দাবিতেই সিলমোহর পড়ল।

স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর মেয়ে। ছোটবেলায় দিল্লির এয়ার ফোর্স মিউজিয়ামে ঢোকার পর থেকেই ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার পর হায়দরাবাদে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। কেরিয়ার শুরু হয় MiG-21 Bison যুদ্ধবিমান উড়িয়ে। ২০২০ সালে ‘রাফাল’ ওড়ানোর প্রশিক্ষণ পান।  ২০২৩ সালে ফ্রান্সে আয়োজিত Exercise Orion-এ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেন। 

তবে ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ‘বালাকোট অভিযান’ চালায় ভারত, তার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গীর। ‘বালাকোট অভিযানে’র সময় পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামান গ্রুপ ক্যাপ্টেন (তদানীন্তন উইং কমান্ডার) অভিনন্দন বর্তমান। কিন্তু ডগফাইট চলাকালীন তাঁর যুদ্ধবিমানটিতে গুলি লাগে। পাক অধিকৃত এলাকাতেই নামতে হয় অভিনন্দনকে। পাক সেনার হাতে বন্দি হন তিনি। তবে ভারত ও আন্তর্জাতিক চাপে ৬০ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে মুক্ত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ২০১৭ সালে রাজস্থান সীমান্তে মোতায়েন থাকার সময় অভিনন্দনের সঙ্গে যুদ্ধবিমান উড়িয়েছেন স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী। অভিনন্দনের থেকে খুঁটিনাটি শেখেন। পরবর্তীতে ‘অপারেশন সিঁদুরে’ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগে তাঁর। তবে তাঁকে বন্দি করতে পারেনি পাকিস্তান।