কলকাতা: একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তুলোধনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, এজেন্সিদের ঠিকাদার হয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারকে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। না হলে দেশ বরবাদ হয়ে যাবে।
বিজেপিকে আক্রমণ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আজ বিপদে। বিজেপি বিপদে ঠেলে দিয়েছে। বিজেপির সিন্ডিকেট দেশকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। নিজেদের মন্ত্রীকেও বিশ্বাস করে না। বিরোধী নেতাদের বিরক্ত করে। ঘরে এজেন্সি পাঠিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে যোগী, এত বড় নেতা। এটাই ওর কাজ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, বিজেপি একটা লোডেড ভাইরাস পার্টি। করোনার চেয়েও বড় ভাইরাস বিজেপি-তে আছে। বেকারি বেড়েছে। শুধু গুলি চালাও, সবাইকে মেরে দাও। এই তো রাজনীতি ওদের। তিনি বলেন, বিজেপির মগজে মরুভূমি। মানবাধিকার জানে না। শুধু ফোন ট্যাপ আর স্পাই গিরি করলে সব হয় না। এজেন্সিদের ঠিকাদার হয়েছে বিজেপি।
তিনি যোগ করেন, ভারত সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র। বিজেপি তা ধ্বংস করছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করছে। গণতন্ত্রের ৩টি মূল স্তম্ভ - ভোট, জুডিশিয়ারি, মিডিয়া - পেগাসাস এসে ইলেকশন প্রসেস ক্যাপচার করেছে, জুডিশিয়ারি ক্যাপচার করেছে, মিডিয়া হাউসগুলো ক্যাপচার করেছে। ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। গোয়েন্দাশাসিত স্টেট বানাতে চাইছেন।
এদিন নরেন্দ্র মোদিকেও নিশানা করেন মমতা। বলেন, মোদিজি পার্সোনালি আপনাকে আক্রমণ করছি না। রাজনীতিতে এটুকু সৌজন্য থাকা উচিত। যেটা আপনাদের নেই। আপনি ও শাহ (অমিত) এজেন্সিকে কাজে লাগান। বিপক্ষকে বিরক্ত করেন। কালা আইন তৈরি করেন। কিন্তু মানুষের কী চাইছে, সেব্যাপারে কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না। বাংলার মানুষ আপনাদের ওই জন্য সুযোগ দেয়নি। গোটা ভারত, বিশ্বের মানুষ বাংলার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাঁদের সেলাম জানাই।
তৃণমূলনেত্রী যোগ করেন, আমি সবসময় মনে করি, বাংলার মানুষ উন্নয়ন চান। তাই তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছেন। গুড গভর্নন্সের কোনও বিকল্প নেই। তোমরা শুধু ধ্বংস চাও। বিভেদ চাও। কনফিউশন চান। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাটির লোক। তিনি বলেছিলেন, উচ্চ যেথা শির। ভারত নেতাজি, গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, আব্দুল কালাম, ভগৎ সিংহের মাটি। আমরা চাই সমাজের প্রতিটি সম্প্রদায়ের উন্নয়ন হোক। কিন্তু আপনারা তো স্রেফ নিজেদের উন্নয়ন চান। আমি বিশ্বাস করি, ভারতের প্রো-পিপল গভর্নমেন্ট মডেল। ভারতে শিল্প, অর্থনীতি, কৃষির সুস্থিতি দরকার। বেকারত্ব কমা দরকার। এগুলোই ভারতের প্রধান চাহিদা। কিন্তু তোমরা কিছুই করনি। তোমরা শুধু যারা মানুষের জন্য কাজ করতে চায়, তাদের উত্যক্ত করো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের উত্যক্ত করবেন না। সবাইকে বিনামূল্যে রেশন দিন।
করোনা ইস্যুতেও মোদি সরকারকে আক্রমণ করেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, মোদি সরকার মনুমেন্টাল ফেলিওর। ৪ লক্ষ লোক মারা গেছে আপনাদের জন্য। কেউ অক্সিজেন পায়নি। সেকেন্ড কোভিডের মধ্যে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে বাংলায় এসেছেন। ধ্বংস করে দিয়েছেন সব। আপনি কি ভাবছেন, মানি, মাসল, পেগাসাস কাজে লাগিয়ে সব দখল করবেন? বাংলার মানুষ তো বুঝিয়ে দিয়েছে। পঞ্জাব, বাংলা, মহারাষ্ট্র যেভাবে লড়াই করেছে, আগামী দিনে সেই লড়াই চালিয়ে।
তিনি যোগ করেন, কোভিড নিয়ে দেশকে শেষ করে দিয়েছে। কোভিডে মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসায়। আর প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা লাগে না, উত্তরপ্রদেশকে উত্তম প্রদেশ বলছেন। মরার পর শেষকৃত্য পর্যন্ত করতে দাও না, নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছো। বিহার সে ব্যবস্থা করেছে। বাংলা করেছে। শেষ সম্মান জানিয়েছে।