কলকাতা: রাত পোহালেই ধর্মঘট। মোদী সরকারের শ্রমনীতির বিরুদ্ধে শুক্রবার এই সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু, আইএনটিইউসি সহ এগারোটি ট্রেড ইউনিয়ন।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ধর্মঘট রুখতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বলেন, বনধ করে কিছু হয় না। ভাঙচুর করলে তার কাছ থেকেই টাকা আদায় করব। তিনি যোগ করেন, এই মর্মে আইন আনা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বলেন, আইন করা যায় কিনা দেখছি। এই বিষয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।
তবে, পাল্টা ধর্মঘটীরাও অবস্থানে অনড়। সিটু সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, প্রশাসন সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদেরও মানুষ আছে। তেরে পাস বাংলা হ্যায়, গাড়ি হ্যায়। মেরা পাস জনতা হ্যায়।
ধর্মঘটী এবং সরকারের এই সম্মুখসমরে আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ! যেমন, মফস্বল আর কলকাতার মধ্যে যোগাযোগের প্রধান ভরসাই হল ট্রেন। যে কোনও বনধ-ধর্মঘটেই জায়গায় জায়গায় অবরোধ করা হয় রেললাইন। প্যান্টোগ্রাফে কলাপাতা জড়িয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচল।
এপ্রসঙ্গে পূর্ব রেলের সিপিআরও রবি মহাপাত্র বলেন, আমরা বনধে অংশ নিচ্ছি না। সমস্ত ট্রেন সময়ে চালানোর চেষ্টা করব। বিঘ্ন ঘটলে সরাতে চেষ্টা করব। ট্রেনের পরেই যদি শহরের লাইফলাইন কিছু থাকে, তাহলে সেটা বাস।
শুক্রবার ধর্মঘটের দিনে রাস্তায় কি বাসের দেখা মিলবে? ধর্মঘটীদের হুঁশিয়ারি, ধর্মঘট হবে সর্বাত্মক! বাম চালক থেকে হেল্পার, সামিল হবে সবাই। বাস মালিক সংগঠনগুলি অবশ্য এ নিয়ে মধ্যপন্থা নিচ্ছে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমরা চাই অন্যান্য দিনের মতো বাস চলুক। স্ট্যান্ডে থাকে বাস। চালকের কাছে চাবি। তারা আসবে কিনা।
সরকার অবশ্য গাড়ি নামাতে আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছে। প্রতিবারই ধর্মঘটে সবথেকে বেশি হয়রানির মুখে পড়েন পর্যটকরা বা সেই মানুষগুলো, যাঁরা সকালে বাইরে থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছোন। বিমানবন্দর কিংবা শিয়ালদা-হাওড়া স্টেশন থেকে কপাল ঠুকেও ট্যাক্সি মেলে না। মিললেও চড়া ভাড়া।
শুক্রবারও সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না তো? বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ অবশ্য বললেন, আমরা কোনও বনধে বন্ধ করি না। কাল চলবে। স্বাভাবিক। রাস্তায় গাড়ি নামাবে।
এসবের তুলনায় মাটির নীচে মেট্রো অনেকটা ঝঞ্ঝাটমুক্ত। কলকাতা মেট্রোর সিপিআরও ইন্দ্রাণী মুখথোপাধ্যায় বলেছেন, রোজকার মতো শুক্রবারও মেট্রো নর্মালি চলবে।
গোলপার্কের অটো স্ট্যান্ডে অটো চালাতে হবে বলে ফতোয়া দিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন। এসব দিনে সাধারণ মানুষের বড় ভরসা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, কলকাতায় ৩৫৭টি পুলিশ পিকেট থাকছে। রেল স্টেশন, বাস ও ট্রাম ডিপো, মেট্রো স্টেশন, ফেরিঘাটে আলাদা পুলিশ পিকেট করা হবে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়ে যাবে নজরদারি।
রিজার্ভ ফোর্সের অফিসাররা বিভিন্ন ডিভিশনে থাকবেন। ধর্মতলা, হাজরা, রাসবিহারী, শ্যামবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবেন পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা। তথ্যপ্রযুক্তি করিডর, অর্থাৎ যেসব জায়গা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের কর্মীরা যাতায়াত করেন, যেমন বানতলা, উল্টোডাঙা, ইএম বাইপাসে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত দোকানপাট খোলা রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তারকনাথ ত্রিবেদী বলেছেন, কাল দোকান খোলা রাখব। পরিবেশ অনুকূল রাখলে খোলা রাখব। পাশাপাশি, ফোরাম অফ ট্রেডার্স অর্গ্যানাইজেশনের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেছেন, কাল বাজার খোলা থাকবে। সরকার বলেছে সহায়তা করবে।
একদিকে বাম-কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের ডাকে ধর্মঘট, অন্যদিকে বিরোধিতায় তৃণমূল সরকার। শুক্রবার আবার তৃণমূলের আহ্বানে ব্লকে ব্লকে সিঙ্গুর দিবস। অর্থাৎ কৌশলী চাল। সব মিলিয়ে মুখোমুখি ধর্মঘটী এবং সরকারপন্থীরা।