আবীর দত্ত, বোলপুর: দুপুর থেকে সন্ধে টানা গান গেয়ে উপার্জন ২৫০ টাকা । আবার কোনও দিন কিছুই মেলেনা । শিল্পী হলেও পাচ্ছেন না শিল্পী ভাতার টাকা । ১৫ বছর বয়স থেকে বাড়িতে আর সোনাঝুরি এই হচ্ছে সীমানা । ৪১ বছর ধরে বাউল গান গেয়েও শিল্পী তকমা আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ খোদ বোলপুরে দিগন্তপল্লির বাসিন্দা সনৎ দাস বাউলের । তাই মন ভালো নেই তার।


"কেউ আমারে দিল ব্যথা, কেউ নিল আপন করে, বাউল জীবনটারে " এই গান যখন এক বাউল সোনাঝুরিতে গাইছে কেউ নেই, সামনে আসছেও না কেউ সামনে । এই গানের থেকে, "মনের মানুষ, পীড়িত করোনা, সোহাগ চাঁদ শুনতে চায় সবাই" জানালেন, সনৎ দাস বাউল। আসলে নিজের কিছু কথা গান দিয়ে বোঝাতে চান । চেষ্টাই করে যাচ্ছেন । যেমন চেস্টা করেছেন ২০১৪ থেকে শিল্পী ভাতার জন্য । এখনো পর্যন্ত হয়নি । আদৌ কী পাবো? প্রশ্ন ৪১ বছর ধরে সোনাঝুরিতে গান গেয়ে যাওয়ার এই বাউলের ।

কেউ বুকিং করে যদি নিয়ে যায় তাহলে হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন আবার গ্রুপে গেলে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেন। কিন্তু দরদাম করে প্রায়  প্রত্যেকেই দাম কমিয়ে দেন । সোনাঝুরিতে কয়েক হাজার বাউল থাকলেও সবাই কি ভালো আছে প্রশ্ন সনদ দাস বাউলের। কথা দিয়েও কেউ কথা রাখেনি আক্ষেপ তাঁর।

"আমি ও আমার স্ত্রী ছাড়াও তিন মেয়ে আমার আছে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি.পড়াশোনা বেশিদূর কাউকেই করাতে পারেনি তার কারণ টাকা নেই। যেদিন গাঙ্গে কোন উপার্জন হয় না। সেদিন খাওয়া-দাওয়া হরিবোল হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক জায়গায় গেছি কিন্তু শিল্পী ভাতা পাচ্ছি না আমি । সবাই শুধু গান শুনতে আসে, ছবি তোলে। আর বেশিরভাগই চলে যায়। আমি তাকিয়ে থাকি কিন্তু তারা চলে যায়। শিল্পী তো মুখ ফোটে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে। তাই আমার এই ছটা বাদ্যযন্ত্র দিয়েই গান গাওয়া হয়ে যায়। শেষ বয়সে আর কিছু আশা ও তাই রাখিনা। আজকে গান গাইতে পাচ্ছি। এরপর আবার হরিবোল বলে গান হয়তো গাইতে পারব না। বাড়িতে অন্য কেউ বাউল নেই। শুধু আমি। বাবার কথা শুনে চাষবাস করতে যাইনি। গানের উপরে মনটা ছিল। তাই আজও গান গেয়ে যাই।'

যদিও  বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল জানিয়েছেন, "পাঁচ হাজারের ওপর বাউল আমাদের জেলা থেকে শিল্পী ভাতা পায়ে, বড়ো জোর ১০০ শিল্পী হয়তো বাকি আছে, সেটাও হয় যাবে, কোনো অসুবিধা থাকবে না ।"