পশ্চিম বর্ধমান ও কলকাতা: রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এটাই হয়ত শেষ অনুষ্ঠান। এরপর হয়তো সরিয়ে দেবে। দুর্গাপুরে ফের বিস্ফোরক জিতেন্দ্র তিওয়ারি।


আসানসোলের পুর প্রশাসক তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনও মিটিং-মিছিল না করতে। কিন্তু এখানে আসব বলে আগেই কথা দিয়েছিলাম। তাই এসেছি। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এটাই হয়ত শেষ অনুষ্ঠান। এরপর হয়তো আমাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। জেলা সভাপতি, বিধায়ক বা পুর প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।


২ দিন আগেই পুরমন্ত্রীকে তাঁর লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। এই প্রেক্ষাপটে ফের একবার ক্ষোভ উগড়ে দিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনও মিটিং-মিছিল না করতে। কিন্তু এখানে আসব বলে আগেই কথা দিয়েছিলাম। তাই এসেছি। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এটাই হয়ত শেষ অনুষ্ঠান।


যদিও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বারণ করা প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রর অভিযোগ উড়িয়ে দেন ফিরহাদ। বলেন, ওর রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কেন করবে না? এবিষয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। ও কেন বলছে জানি না।


তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করে ফিরহাদ হাকিমকে নিশানা করেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। বলেন, ববি হাকিম শুভেন্দুর সমালোচনা করছেন। কিন্তু ববির থেকে শুভেন্দুর গুরুত্ব অনেক বেশি। লড়াই করে উঠে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারি। ববির মুখে শুভেন্দুর সমালোচনা মানায় না ।


এদিন যে কারখানার সামনে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভা হয়, সেখানে সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকবার শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে। প্রকাশ্যে আসে আইএনটিটিইউসির গোষ্ঠীকোন্দলও।


এদিন শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেন, বহিরাগতদের টাকার বিনিময়ে এই কারখানায় ঢোকানো হচ্ছে। কিছু নেতার বাড়ি দো’তলা থেকে তিনতলা হয়েছে। মানুষ কী কিছু জানে না? মানুষ সব বুঝতে পারছে।


পাল্টা জবাব দিয়েছেন পুরমন্ত্রীও। বলেন, কিসের চাকরি, কেন চাকরি, জানি না। আলাদা সংস্থা রিক্রুট করে।


গত সোমবার ফিরহাদ হাকিমকে লেখা জিতেন্দ্র তিওয়ারি একটি চিঠি প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। চিঠিতে জিতেন্দ্র অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার! এর পরই ফিরহাদের সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।


এপ্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী বলেন, ও গ্যাস খেয়ে বলছে। বিজেপি ভুল বোঝাচ্ছে। দলের দরজা সবার জন্য খোলা আছে। জবাবে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন,আমি যদি বলি ও ইমরান খানের গ্যাস খেয়ে বলছে, তাহলে কী হবে? ফিরহাদ হাকিম ঠিক করবে কে দলে থাকবে, কে না।


বুধবার শ্রমিক সংগঠনের সভায় ফের সেই চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেন, ববি বলছে আমি ওর ভাই। কিন্তু ভাই বললে তো ভাগ চাইবে। আমরা ভাগ দিতে চাই না। উন্নয়ন চাই। একটি চিঠি দিয়েছি। কী অন্যায় করেছি? কোনও সমস্যার কথা বললেই বিজেপি তকমা দেওয়া হচ্ছে। যেতে না চাইলেও ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।


মঙ্গলবার আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেস হিন্দি প্রকষ্ঠের একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন জিতেন্দ্র। সেই সঙ্গে নাম না নিয়ে দলের একাংশকে নিশানা করতেও ছাড়েননি তিনি। এদিও তাঁর গলায় ছিল আক্রমণের সেই সুর। বলেছিলেন, দলে যাঁরা এক নম্বর, দু’নম্বর তাঁরাই দলটাকে শেষ করছে। মানুষের সঙ্গে ছিলাম। মানুষের সঙ্গে থাকব।


কার্যত একই কথা শোনা গিয়েছে দলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পারিয়ালের গলাতেও। বলেছিলেন, দিদিকে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি। নিজের দলের রাশ নিজের হাতে ধরুন। দলের এক নম্বর, দুনম্বর তিন নম্বররা ভুল তথ্য দিয়ে দলটাকে শেষ করছে।


ভোটের মুখে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের বিস্ফোরক অভিযোগের জেরে পশ্চিম বর্ধমানে অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূলের। এরপর কী দল ছাড়বেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক? নাকি শেষ পর্যন্ত জিতেন্দ্রর ক্ষোভ প্রশমনে সক্ষম হবে তৃণমূল? উত্তর দেবে সময়।