হাওড়া ও হুগলি: দামোদরের জল হু হু করে ঢুকছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিভিন্ন গ্রামে। তীব্র আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। অন্যদিকে, বাঁধ ভেঙে দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণের জল ভাসিয়ে দিচ্ছে হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা।
হুগলির বিস্তীর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকা জলের নীচে। আরামবাগের জুবিলি পার্ক এলাকায় পুরসভা ও মহকুমাশাসকের দফতরের অদূরে দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ বুধবার সকালে ভেঙে যায়। হু-হু করে জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়।
আরামবাগের সতীতলা, মনসাতলা, কালীপুর সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। জল ঢুকে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়িতে। অসহায় বাসিন্দাদের অনেকে ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির ছাদে।
একাধিক স্কুল এবং সরকারি দফতরও জলের তলায়। একই পরিস্থিতি খানাকুলেরও। সেখানেও মঙ্গলবার রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙেছে। ফলে বহু এলাকা জলমগ্ন। গোঘাট, খানাকুলের কয়েকটি জায়গায় এদিন ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয়রা।
দ্বারকেশ্বরের জলে প্লাবিত আরামবাগ পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড। ঘরছাড়া হাজার খানেক মানুষ। সর্বস্ব খুইয়ে ঠাঁই হয়েছে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকা। তারইমধ্যে খাওয়া-দাওয়া। বন্যা দুর্গতদের অসহনীয় জল-যন্ত্রণা!
বুধবার সকালেও বহু মানুষ গলা জল ভেঙে চলে এসেছেন আরামবাগের কালীপুর হাইস্কুলের এই ত্রাণ শিবিরে। বাড়ি ছাড়ার আগে হাতের কাছে যে যা পেরেছেন, নিয়ে চলে এসেছেন। কারও আবার সেই সৌভাগ্যটুকুও হয়নি! ফেলে আসতে হয়েছে সব।
আরামবাগের কালীতলা হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে আপাতত একপদ, শুধু সয়াবিন দেওয়া খিচুড়ি। তা দিয়েই পেট ভরাচ্ছেন দুর্গতরা। গোঘাটের কুমুড়সা গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্যা দুর্গতরা পড়েছেন আতান্তরে। অভিযোগ, ত্রাণ শিবির তো দূর, ত্রাণের জিনিসই মিলছে না ঠিকমতো। অসহনীয় পরিস্থিতিতে এদিন পঞ্চায়েত অফিসে আছড়ে পড়ে তাঁদের ক্ষোভ!
এদিকে, বুধবার সকালে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে জেলার বিভিন্ন দুর্গত এলাকা ও ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন কৃষি বিপণনন্ত্রী তথা হুগলির তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। বলেন, ১৫০টি ক্যাম্প করব। ত্রাণ সামগ্রী মজুত। সরকার সবরকমভাবে প্রস্তুত রয়েছে। দ্রুত স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি, মনেপ্রাণে সেই প্রার্থনাই করছেন হুগলির বিস্তীর্ণ অংশের বন্যা দুর্গতরা।
হুগলির পাশের জেলা হাওড়াতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। ডিভিসি জল ছাড়ায় দামোদর ফুঁসছে। আর সেই জলই হু হু করে ঢুকছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর গ্রামে।
বকপোঁতা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে প্রায় পাঁচটি জায়গা দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এভাবে জল ঢুকতে থাকলে উদয়নারায়ণপুরের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ৯০টি গ্রাম জলের তলায় চলে যাবে। অনেকে ইতিমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন।
দামোদরের বাঁধে বালির বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে জলের তোড়ের সামনে সেসব টিকলে তো! কিন্তু, প্রকৃতির রোষের ওপর আর কার কথা চলে! তাই আশঙ্কা ও আতঙ্ককে সঙ্গী করেই আপাতত দিন কাটাচ্ছেন এই মানুষগুলো।