কলকাতা: ভবানীপুরে শেষদিনের প্রচারে দিলীপ ঘোষ ও অর্জুন সিংয়ের কর্মসূচিতে গন্ডগোলের জেরে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করল পুলিশ। বেআইনি জমায়েত, হুমকি ও মারধরের ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ভবানীপুরে গতকাল বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাংসদ অর্জুন সিংয়ের কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশকে জানিয়ে অনুমতি নেওয়া হয়নি। শুধু যদুবাবুর বাজারে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচির অনুমতি নেওয়া ছিল বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। ঘটনার তদন্তে নেমে ভবানীপুরে ধুন্ধুমারকাণ্ডে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভবানীপুরের উপনির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তা নিয়ে আলোচনার জন্য আজ বিকেলে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার ৯টি থানার ওসিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এমনটাই লালবাজার সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, গতকাল প্রচারের শেষ লগ্নে ভবানীপুরে ধুন্ধুমার বেঁধে গিয়েছিল। যদুবাবুর বাজারে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে তৃণমূল কর্মীদের। চলে ধস্তাধস্তি, ধাক্কা, হাতাহাতি।ঝরে রক্তও।মাথা ফাটে এক বিজেপি কর্মীর।পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে হুঁশিয়ারি দেন দিলীপ ঘোষের নিরাপত্তারক্ষীরা।গতকাল যদুবাবুর বাজারে প্রচারে যান দিলীপ ঘোষ।বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন তিনি। একই সময়, একই এলাকায়, দিলীপ ঘোষের পাল্টা প্রচার শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরাও।গলি ছেড়ে রাস্তায় আসেন দিলীপ ঘোষ। শুরু করেন লিফলেট বিলি। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, বিজেপি সাংসদকে সেখানে নিগ্রহ করা হয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তৃণমূলের কর্মীরা।পাল্টা, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন দিলীপ ঘোষ ও বিজেপি কর্মীরা।
এরপর, ভ্যাকসিনেশন দেখতে, একটি পুরস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢোকেন বিজেপি সাংসদ। এতেই উত্তপ্ত হয়ে পরিস্থিতি। দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলকর্মীরা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি।সেই সময় মেরে এক বিজেপি কর্মীরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এক তৃণমূল কর্মী দাবি করেন, এখানে আজ পর্যন্ত গন্ডগোল হয়নি, ইচ্ছে করে এসব করছে, ভোট বানচাল করতে চাইছে।দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিকে ঘিরে ধরেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। ধস্তাধস্তির মধ্যে কোমর থেকে পিস্তল বের করেন দুই নিরাপত্তারক্ষী।পরে, উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে থেকে কোনওরকমে দিলীপ ঘোষকে বের করে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। এই ঘটনা ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়।
যদুবাবুর বাজারে বিজেপির সভা চলাকালীন বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।যখন মঞ্চে বসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালরা, তখন গো-ব্যাক স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা।পুলিশ কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়,তৃণমূলকর্মীদের।দিলীপ ঘোষের উপর হামলার খবর পেয়ে, যদুবাবাবুর বাজার থেকে ঘটনাস্থলে যান বিজেপি কর্মীরা। পাল্টা, বিজেপি কর্মীদের ধাওয়া করেন তৃণমূল কর্মীরা। উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।আক্রান্ত দুই বিজেপি কর্মীকে যদুবাবুর বাজারের মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আসেন অর্জুন সিংহ। পাল্টা, অবস্থানে বসেন তৃণমূলকর্মীরা।
অর্জুন সিংহকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। পাল্টা, তৃণমূলকর্মীদের ধাওয়া করেন অর্জুন সিংহর নিরাপত্তারক্ষীরা।পরে, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত বিজেপি কর্মীদের নিয়ে আসা হয় এএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে চলে আসেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রিয়ঙ্কা টিরবেওয়াল-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা।আহত বিজেপি কর্মীদের অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে, তৃণমূলের আহত কর্মীকে দেখতে এসএসকেএমে আসেন মদন মিত্র।
এর আগে, সোমবার সকালে, শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটে প্রচারে গেলে অর্জুন সিংকে ঘিরে গো ব্যাক স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা। রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের কর্মীরা। অর্জুন সিংহের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সরাতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। শুরু হয় বাদানুবাদ। পরে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বিজেপি সাংসদকে বের করে নিয়ে যান। অর্জুন সিংহর গাড়ি ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। ভবানীপুরের ঘটনায়, রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন।