দক্ষিণ ২৪ পরগনা: জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলা। তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন একদল কর্মী। বিজেপি সভাপতি-সহ কনভয়ে থাকা কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরের একাধিক নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে দফায় দফায় চলল ইটবৃষ্টি। আহত হলেন বিজেপির একাধিক নেতা। আক্রান্ত হল এবিপি আনন্দও। নাড্ডার কনভয়ে হামলার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিকেল ৪ থেকে সন্ধে ৬ পর্যন্ত হবে বিক্ষোভ। জানানো হয়েছে রাজ্য বিজেপির তরফে


বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ডহারবারে ছিল বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডার কর্মিসভা। হাইভোল্টেজ এই সভা ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠেছিল আগেই। কিন্তু এদিন সেই সভায় পৌঁছনোর পথেই নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটল বিজেপি সভাপতির কনভয়ে।


ডায়মন্ডহারবারের রেডিও স্টেশন মাঠে জেপি নাড্ডার কর্মিসভা ছিল। ঠিক তার ২০ কিলোমিটার আগে শিয়াকল মোড়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শওকত মোল্লা ও মগরাহাট পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি পথসভা ছিল শাসকদলের।


তার জেরে বিষ্ণুপুর থানার আমতলা মোড় পৌঁছতেই যানজটে আটকে যায় নাড্ডার কনভয়। এরপর ডান দিকের লেন ধরে শ্লথগতিতে এগোতে থাকে গাড়িগুলি। সেখান থেকে কিলোমিটার পাঁচেক এগোতেই শিরাকল মোড়ের কাছে প্রথম হামলা হয় নাড্ডার গাড়িতে। গাড়ি লক্ষ্য করে উড়ে আসে লাঠি, পতাকা লাগানোর ডান্ডা।


নাড্ডার গাড়ির পিছনের গাড়িগুলির ওপরেও শুরু হয় ইটবৃষ্টি। বিজেপি সভাপতির নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা কোনওক্রমে নাড্ডার গাড়িকে সেখান থেকে বের করে আনেন।


কনভয়ে নাড্ডার গাড়ির পিছনেই ছিল দিলীপ ঘোষের গাড়ি। হামলা হয় সেই গাড়িতেও। কনভয়ে সামনের দিকেই ছিল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীর গাড়ি। ইটের আঘাতে হাতে চোট পান তিনি।


হামলার জেরে চলন্ত বাইক নিয়ে পড়ে যান কনভয়ের মধ্যে থাকা এক বিজেপি কর্মী। এরপর একে একে হামলা চলে মুকুল রায়, অনুপম হাজরা, রাহুল সিনহা....সহ একাধিক বিজেপি নেতার গাড়িতে।


ভেঙে চুরমার হয়ে যায় কনভয়ে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের একাধিক গাড়িও। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি কনভয়ের পিছনে থাকা একটি মিনিবাসও।


এই পরিস্থিতিতেই সভাস্থলের দিকে রওনা দেয় বিজেপি সভাপতির কনভয়। মাঝে একাধিক জায়গায় গো ব্যাক স্লোগানও দেওয়া হয় নাড্ডাকে। শিরাকল দিয়ে যাওয়ার সময় ঢিল ছোঁড়া হয় এবিপি আনন্দের গাড়িতেও।


এই অবস্থার মধ্য দিয়েই শেষপর্যন্ত সভাস্থলে পৌঁছয় জেপি নাড্ডার বিশাল কনভয়। প্রায় বেশিরভাগ গাড়িই তখন ভেঙে চুরমার! একাধিক কাচ ভেঙে যায় দিলীপ ঘোষের গাড়িরও।


ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে হামলার ঘটনা নিয়ে সুর চড়ান জে পি নাড্ডা। বলেন, যখন জঙ্গলরাজ বলছি, এমনি এমনিই বলছি না। দেখুন কৈলাস, মুকুল, রাহুল সিনহা, এদের গাড়িগুলি দেখুন। আমি সুরক্ষিত কারণ আমার গাড়ি বুলেটপ্রুফ। একটাও এমন গাড়ি ছিল না যার ওপরে হামলা হয়নি। প্রশাসন বলে এখানে কিছু নেই। ভেঙে পড়েছে। পুলিশকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সেন্ট্রাল ফোর্স না হলে বাংলায় কোথাও যাওয়াই যায় না।


নাড্ডার মনে করেন, মা দুর্গার কৃপায় তিনি পৌঁছতে পেরেছেন সভাস্থলে। বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, শ্যামাপ্রসাদের মাটিকে প্রণাম। মমতার রাজত্বে বাংলায় অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। মা দুর্গার কৃপায় এখানে পৌঁছতে পেরেছি। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী প্রচেষ্টার কোনও ক্রটি রাখেনি।


তিনি মনে করিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই এই জঙ্গলরাজ শেষ হতে চলেছে। একের পর গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে। এই গুন্ডারাজ শেষ করতে হবে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে এই গুন্ডারাজ শেষ করবে বিজেপি।


নাড্ডা যোগ করেন, ‘আজ বাংলার অবনমন হয়েছে মমতার শাসনে। বিজেপি ফের সোনার বাংলা তৈরি করবে। বাংলা সভ্যতা-সংস্কৃতির জননী। সেই বাংলাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মমতার শাসন।


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এদিন কটাক্ষ করেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি। বলেন, এখানকার সাংসদকে সংসদে দেখা যায় না। পুলিশ প্রশাসনের রাজনীতিকরণ শুরু হয়ে গেছে। রাজ্যে প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে রাজ্যে ঘোরা সমস্যা।’


বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা প্ররোচনা দিয়ে অশান্তি পাকানোর অভিযোগ করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, পরিকল্পনামাফিক প্ররোচনা বিজেপির। বিজেপির কেউ গাড়ি ভাঙলে অবাক হব না। আমাদের কেউ ভেঙে থাকলে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেব। রিপোর্ট কার্ড পেশের অনুষ্ঠান বানচাল করার জন্য গন্ডগোল পাকানো হয়েছে।


অন্যদিকে এদিনের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের তরফে ট্যুইট করে বলা হয়েছে, ডায়মন্ড হারবারে সুরক্ষিতভাবেই পৌঁছেছেন জে পি নাড্ডা। নাড্ডার কনভয়ে কিছুই হয়নি। দেবীপুর, ফলতায় কিছু দুষ্কৃতী হঠাৎ পাথর ছোড়ে। কনভয়ের শেষের দিকের কিছু গাড়িতে পাথর ছোড়া হয়। প্রত্যেকেই সুরক্ষিত আছেন। ঠিক কী ঘটেছে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।