কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: করোনা অতিমারির কোপে রথের চাকা, তাই রাজবাড়ির অভ্যন্তরেই  কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর ফের মন্দিরে ঢুকলো বর্ধমানের রাজরথ অর্থাৎ বর্ধমান রাজবাড়ির রাজা-রানির জোড়া রথ। 


মেলা বা লোক সমাগম ছাড়াই গোনা কয়েকজন ভক্ত নিয়েই বর্ধমানে রাজ আমলে প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে এ ভাবেই অনুষ্ঠিত হল এ বারের রথযাত্রা ।  বিশেষ পূজা পাঠের পর রথ বের হলেও সেই রথের চাকা থামল মন্দির চত্বরেই। 


বর্ধমান রাজবাড়ি সংলগ্ন  সোনাপট্টিতে রয়েছে লক্ষী নারায়ণ জিউ মন্দির। সেখানেই রয়েছেন সাড়ে তিনশো বছরেরও পুরনো রাজা-রানির রথ।বর্ধমান মহারাজা মহতাবচাঁদের আমলে ছিল পাঁচ তলার রথ।এখন তা অনেক ছোট হয়ে গিয়েছে। এখানে দুটি রথ রয়েছে।একটি রাজার রথ।অন্যটি রানির। রাজার রথ আগে ছিল রূপোর। এখন কাঠের। রানির রথ পেতলের। এখানে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা থাকে না। বদলে রাজার রথে উঠে বসেন  লক্ষ্মীনারায়ণ,আর রানির রথে থাকেন রাধা গোপাল। আগে এই রথের জাঁকজমকই ছিল আলাদা। প্রথা মেনে মহারাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহতাব এই রথের সেবায়েত। 


আগে এই রথের বিরাট মেলা বসত।হাজার হাজার লোক আসত।গমগম করত।সেসব অস্তমিত হয়েছিল আগেই।তবুও মেলার চল এখনও আছে।তবে এবারে কোভিডের অভিশাপে মেলা বসেনি।আগের বছর মন্দিরের সিংহদরজাও খোলেনি।   এবারে মন্দিরের দরজা খুললেও প্রথা মেনে পূজা অচর্না ছাড়া জাঁকজমক কিছু ছিল না।


রাজবাড়ীর লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র জানান, এখানে আগে যে দুটি রথ ছিল ,তার একটি রূপোর। অন্যটি পিতলের।রুপোর রথ আর নেই।ভিতরে এখন থাকে কাঠের রথ।একটি রথে থাকেন গোপাল।অন্যটিতে লক্ষীনারায়ণ জিউ।তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের মতো এবারও ভক্তদের মধ্যে স্নানজল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। 


এ বারের রথযাত্রা আড়ম্বরহীন হওয়ায় মনমরা ভক্তদের অনেকেই।বর্ধমানের বাসিন্দা পদ্মা দে জানান, রথের মেলাতে ছোটো বেলার আবেগ ছুঁয়ে দেখতে আসি।রথের মেলাতে ছোটোবেলাকে ফিরে পাই,তার জন্যই প্রতিবছর আসা।গতবার সিংহ দরজা বন্ধ ছিল করোনার কারনে।এবারে দরজা খুলেছে,মেলা বসেনি।রাজার ঐতিহ্য আজও আছে।তবে একটু বেশী যত্ন পেলে আমরা ফেলে আসা দিনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।


‘রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।’ গতবারের মত এবারও দেখা গেল না রথযাত্রার সেই চেনা ছবি কোথাও দেখা গেল না।


করোনার আগে এবং করোনার পরে...জীবন যেন এক অন্যখাতে বইছে এখন।প্রথা মেনে বীরভূমের তারাপীঠে রথযাত্রার দিন তারা মায়ের বিশেষ পুজোর আয়োজন হলেও স্থগিত রাখা হল তারা মাকে রথে নিয়ে এলাকায় ঘোরানোর রীতি। মন্দিরের সেবায়েতরা মিলে তারা মায়ের প্রতিকৃতি রথে প্রতিষ্ঠা করে বিশেষ পুজোর আয়োজন করেন। পুজো শেষে প্রতিকৃতি ফেরানো হয় মন্দিরে। 


কথিত আছে,সাধক বামাক্ষাপার সময় থেকে এখানে তারা মাকে রথে বসিয়ে জগন্নাথ রূপে বিশেষ পুজো-অর্চনার আয়োজন করা হয়।অন্য মতে, সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথের সময় থেকে এই বিশেষ পুজো-অর্চনা শুরু হয়।১৭ ফুট উঁচু পিতলের তৈরি রথে মাকে বসিয়ে ঘোরানো হয় এলাকায়। তবে করোনা আবহে এবার আর দেখা গেল না পুরনো সেই ছবি।  রথের উপরে তারামায়ের ছবি বসিয়েই পুজো সারলেন সেবায়েতরা।করোনা আবহের মধ্যে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে এবারও তারাপীঠে ভক্তসমাগম অনেকটাই কম ছিল।