কলকাতা:   পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার নিয়ে চরমে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই পরিস্থিতিতে, আদালতে ধাক্কা খেল মোদি সরকার! রাজ্য সরকারের বক্তব্যকেই মান্যতা দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, পাহাড় থেকে কেন্দ্রের বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। আমরা মামলা করতে চাই। আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। দুপুর দুটোয় শুরু হয় শুনানি।
এজি বলেন, ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সরকার চিঠি দিয়ে জানায়, পাহাড়ে মোতায়েন থাকা ১৫ কোম্পানি বাহিনীর মধ্যে ১০ কোম্পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। মূল মামলা এখনও বিচারাধীন। হাইকোর্টের নির্দেশে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। পাহাড়ের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এই স্বাভাবিকতাকে ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন।
আদালতে একটি চিঠি পেশ করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। বলেন, এটি মঙ্গলবারই কেন্দ্র পাঠিয়েছে। তারা বলছে, ১০ কোম্পানি নয়, ৭ কোম্পানি বাহিনী প্রত্যাহার করবে। এরপরই বিচারপতি হরিশ টন্ডন কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, কীসের ভিত্তিতে বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত?
কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, কয়েকটি রাজ্যে ভোট আছে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন, ভোটের জন্য তো শুধু হিমাচল প্রদেশেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে! এর জন্য পাহাড় থেকেই বাহিনী তুলে পাঠাতে হবে, তার যৌক্তিকতা কোথায়? যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা বলছেন, সেটি অনেক বড় বিষয়। আপনারা যখন বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন, তখন কিছু যুক্তি দেখিয়েছিলেন, অতএব প্রত্যাহারের সময় সুনির্দিষ্ট কিছু যুক্তি দেখানো বাধ্যতামূলক।
কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, আপনারা জানেন কি, বিএসএফ, সিএপিএফ, এসএসবি-র মতো বেশ কিছু বাহিনীর পশ্চিমবঙ্গেই স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে পাহাড়ে কিম্বা যেখানে ভোট আছে, সেখানে পাঠাতে পারেন।
এরপরই বিচারপতি হরিশ টন্ডন জানান, ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের নির্দেশের ওপর অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ জারি করা হল। আদালতের আরও নির্দেশ, কীসের ভিত্তিতে বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, তা ২৪ অক্টোবরের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাবে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি জানাতে হবে, রাজ্যে কত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর স্থায়ী আস্তানা রয়েছে। হাইকোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রের মঙ্গলবারের চিঠি সম্পর্কে, বুধবারের মধ্যে রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত হলফনামা দিতে হবে।
এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, হাইকোর্টের নির্দেশ ঠিকই আছে। ১১ কোম্পানির সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ কোম্পানি রাখার পক্ষে আগে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টও একই নির্দেশ দেয়। ভাববেন না, এদের রাজ্যে রাখার খরচ কেন্দ্র দেয়। এর আগে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরণপোষণে ২০০ কোটি খরচ হয়েছে।
সোমবার পাহাড় ইস্যুতে নবান্নে বৈঠক করেই বাহিনী প্রত্যাহার নিয়ে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, পাহাড়ে যখন শান্তি ফিরছে, তখন বাহিনী প্রত্যাহার। আলোচনা না করেই। আমরা খুশি নই। একতরফা সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, একটা আসনের জন্য বিজেপি চাইছে রাজ্যকে ভাগ করতে। তাঁর দাবি বাহিনী নিয়ে কেন্দ্র আসলে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে।
পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার প্রসঙ্গে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করতে গিয়ে, মমতা অন্যান্য রাজ্যে কী সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, তার পরিসংখ্যান টেনে আনেন। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ছত্তীসগঢ় ২৫২, ঝাড়খণ্ডে ১২০, দিল্লি ৪০, ওড়িশা ৮৪, বিহার ৪৮... আগে বাংলায় ৬০ ছিল এখন কমে ১৫ কোম্পানি হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার থেকেও সাত কোম্পানি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আগেও তাদের এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের নাম করে তুলে নিয়ে যায় আর ফেরত দেয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যেক রাজ্যেরই প্রাপ্য।
বিজেপি অবশ্য এদিনও কেন্দ্রীয় বাহিনী-ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন দিয়েছিল। মমতা এখন বলছেন, শান্তি, তাই প্রত্যাহার। হাইকোর্ট বলেছে ঠিক আছে। কেন্দ্র তো হলফনামা দেবে, তখন কোর্ট খুশি হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে পাহাড়ের কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।