কলকাতা: শিশুপাচারকাণ্ডে অবশেষে গ্রেফতার জুহি চৌধুরী। মঙ্গলবার রাতে ভারত-নেপাল সীমান্তের কাছে খড়িবাড়ি থানা এলাকা থেকে বিজেপি নেত্রীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে খবর, গোপন ডেরায় আত্মগোপন করে ছিলেন জুহি। সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনের সূত্রে গ্রেফতার করা হয় নেত্রীকে। চন্দনা গ্রেফতার হগওয়ার পর থেকেই ফেরার ছিল জুহি। সিআইডি সূত্রের দাবি, নেপালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল নেত্রী।
জলপাইগুড়ির শিশুপাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ে জুহি চৌধুরীর নাম। জুহির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে হোম কর্তৃপক্ষকে শিশু বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। বদলে নিয়েছেন কমিশন। অভিযোগ ওঠার পর থেকেই গত ১০ দিন ধরে আত্মগোপন করেছিলেন জুহি চৌধুরী। যদিও, বিজেপির রাজ্য সভাপতি একে আত্মগোপন বলে মানতে নারাজ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি ছিল, আগাম জামিনের জন্য চেষ্টা করছে জুহি। নেত্রীও দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে, সিআইডি-র দাবি, হোমকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য শুধু তব্দির করাই নয়, কাজ সম্পূর্ণ করতে হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে নিয়ে একাধিকবার দিল্লিতেও গিয়েছেন বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরী, দন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারিও যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার আগেই গ্রেফতার চন্দনা।
সিআইডি সূত্রে খবর, গত ১০ ফেব্রুয়ারি চন্দনাকে সঙ্গে নিয়ে শেষবার দিল্লি যান জুহি। প্রসঙ্গত, হোম থেকে শিশু দত্তক দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন। সিআইডি সূত্রে দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, সেই অনুমোদনের পুনর্নবীকরণ ও কেন্দ্রের দেওয়া অনুদানের টাকা আনতেই চন্দনাকে নিয়ে দিল্লি যেতেন বিজেপি নেত্রী জুহি।
সিআইডি সূত্রে দাবি, বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জুহির সঙ্গে কেন্দ্রের কয়েকজন মন্ত্রীর যোগাযোগ রয়েছে। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি মসৃণভাবে জলপাইগুড়ির হোমের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ ও অনুদান আদায়ের কাজ সেরে ফেলতেন।
সিআইডি সূত্রে খবর, বিজেপির এক নেতা ও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই দিল্লির নর্থ ব্লকে অনায়াস আনাগোনা ছিল জুহির। সেই সোর্স ব্যবহার করেই চন্দনাকে নিয়ে দিল্লি দরবারে পৌঁছয় সে। ওই প্রভাবশালীদের ভূমিকাও আপাতত সিআইডি নজরে। সিআইডির আরও দাবি, জেরার মুখে চন্দনা জানিয়েছেন, প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা আদায় করে দেওয়ার বিনিমেয় ডুয়ার্সে একটি রিসর্ট তৈরি করে দিতে বলেছিলেন জুহি।
তবে, জুহি চৌধুরীর পাশে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষ আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না দোষী প্রমাণিত হচ্ছে, দল জুহি চৌধুরীর পাশে আছে। দরকার পড়লে সিবিআই তদন্ত হোক। দলীয় তদন্ত হচ্ছে। দোষী হলে পার্টিতে থাকবে না। কাউকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া অপরাধ নয়। অনৈতিক ভাবে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অপরাধ।
প্রসঙ্গত, এদিনই জুহির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বয়ান দেয় মূল অভিযুক্ত চন্দনা। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার জুহি। জানা গিয়েছে, জুহিকে শিলিগুড়ি নিয়ে আসছে সিআইডি। সুকনায় এনে তাকে জেরা করবে সিআইডি।