কলকাতা: গতবছর ঘূর্ণিঝড় আমফানের সময় উপড়ে যাওয়া গাছগুলি কোথায় গেল? তিনদিনের মধ্য়ে সব দফতরের থেকে সেই রিপোর্ট তলব করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। 


এদিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে সেচ দফতরের কাজ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘প্রতিবছরই সেচ দফতর বাঁধ সারাচ্ছে, প্রতিবছরই ভেঙে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জলে যাচ্ছে।’


তিনি বলেন, ‘৫ কোটি ম্যানগ্রোভ বসানো হয়েছে। দুই ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরে আরও ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে।’


এদিন ফের একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতিই সহায়ক বলে মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমফানের সময় প্রচুর গাছ ভেঙেছে, সেই গাছ কোথায় গেল? সব দফতরের থেকে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাই।’


মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘১১ জুন ও ২৬ জুন ভরা কটাল রয়েছে। তার আগে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করতে হবে।’


দিঘা সৌন্দর্যায়েনর কাজ প্রসঙ্গে এদিন অসন্তোষ প্রকাশ করেন ‘দিঘায় সৌন্দর্যায়নের ভিত্তিটাই ভুল হয়েছে। বছরের পর বছর ব্রিজের কাজ কেন আটকে আছে? দিঘার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব নিতে হবে।’


তিনি যোগ করেন, ‘মন্দারমণিতে হোটেলের ক্ষতি হয়েছে নিজেদের দোষে। সমুদ্রের কাছে হোটেল তৈরি করেছে।’


তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ সবথেকে বেশি ভেঙেছে। বিদ্যাধরীর জলে বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রয়োজনে ১০০ দিনের কাজের লোকেদের কাজে লাগাতে হবে।’


মমতার মতে, ‘প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে, বাঁধ ভাঙছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে। অন্তত ১০ বছরের জন্য ঠিকাদারদের দায়িত্ব দিতে হবে।’


নদীর ভাঙন রুখতে কয়েকটি প্রস্তাবও পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘বন দফতর ৫ কোটি করে ম্যানগ্রোভ দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বসানো হোক। ভাঙন রুখতে নদীর পাড়ে ভ্যাটিভার ঘাস লাগানো হোক।’


এর আগে, ইয়াস-পরবর্তী বৈঠকে সেচ ও বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমফানের সময় তো তৈরি হল। তাহলে সব কেন ভেসে গেল? মাটির বাঁধ তো ভাঙবেই। কয়েকটা সেভাবেই করা যেত। কবে থেকে ব্রিজ তৈরি করছে, শেষ আর হচ্ছে না। খালি হচ্ছে আর হবে, হচ্ছে আর হবে। এর এনকোয়ারি হবে।


ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট কী করেছে? ৫ কোটির ম্যানগ্রোভ পুঁতবে বলেছিল। হয়নি। 


প্রসঙ্গত, আমফানের সময় সেচমন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপিতে যোগদানের আগে গতবছর নভেম্বরে সেচমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তার আগে ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত রাজ্যের সেচমন্ত্রী ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তাঁকে বনমন্ত্রী করা হয়।