কলকাতা: দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম ভোটেই যে বিজেপির বৃদ্ধি, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বিজেপির ভোটবৃদ্ধিতে সংকেত দেখছে তৃণমূলও। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বার্তা, ভোট যাতে বিজেপির দিকে না যায় তা মানুষকে বোঝাতে হবে।
দক্ষিণ কাঁথির উপনির্বাচনে বামেদের গ্রাফ পড়েছে। বিজেপির উঠেছে। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, লালের সিংহভাগ ভোটই পড়েছে গেরুয়া শিবিরে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর স্বীকারোক্তি, যেখানে ভোট হয়েছে সেখানে বামপন্থী আন্দোলন এবং সংগঠন, দুইই দুর্বল। বামেদের আন্দোলনে যাঁরা যুক্ত তাঁদের একাংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, দক্ষিণ কাঁথিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৮.৭৬%। কিন্তু এক বছর ঘোরার আগেই, ভোট শতাংশ ৩০.৯৭ শতাংশে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিল বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে, বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৪.২২ শতাংশ ভোট। আর এবার সেখানে সিপিআই প্রার্থী পেয়েছেন ১০.২১%।
অর্থাত ধরে নেওয়া যায়, বামেদের ভোট কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে, বিজেপির-র ভোট বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর তৃণমূলের দুই শতাংশের কিছু বেশি! অর্থাত, বামেদের সিংহভাগ ভোটই চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে!
তা হলে কি রাজ্য রাজনীতিতে এবার তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে টক্কর দেবে বিজেপি? এপ্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা একটা সঙ্কেত পাচ্ছি। ভোট যাতে বিজেপির দিকে না যায় তা মানুষকে গিয়ে বোঝাতে হবে।
এই উপনির্বাচনের দিন কয়েক আগেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয় সঙ্ঘ পরিবারের রামনবমী পালন ঘিরে। অস্ত্র হাতে মিছিলে দেখা যায় বিজেপির রাজ্য সভাপতিকেও। এসবই কি আখেরে বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দিল? সিপিএম অবশ্য বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের জন্য তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, তৃণমূলের অবস্থানই বিজেপির জমি তৈরি করেছে। বিজেপি ও তৃণমূল, একে অপরকে মেরুকরণে সহায়তা করছে। উভয়ের বোঝাপড়া রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বিরোধী ক্ষেত্র বিজেপির হাতে তুলে দিয়েছে।
পাল্টা, বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের আঁতাঁতের অভিযোগে সরব তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সিপিএম তলে তলে বিজেপির কোলে দুলছে। সিপিএমের ভোট চলে গেল বিজেপির দিকে। রাম ও বাম, এই দুই এক হল।
উত্তরপ্রদেশ জয়ের পর বাংলাকে টার্গেট করেছে বিজেপি। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল তাদের বাড়তি অক্সিজেন জোগাতে পারে। কংগ্রেস ও বামেরা যদি ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, তা হলে সামনের বছর, পঞ্চায়েত ভোটে, তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে কড়া টক্কর দিতে পারে বিজেপি।