শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, শীতলকুচি: জন বার্লা, শিখা চট্টোপাধ্যায়, আনন্দময় বর্মনের পর বরেনচন্দ্র বর্মন। উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পক্ষে জোরাল সওয়াল করলেন বিজেপির আরেক জনপ্রতিনিধি।


শুরুটা হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার মন্তব্যের মাধ্যমে। তারপর এক এক করে পৃথক উত্তরবঙ্গের হয়ে সওয়াল করেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। 


আর এবার উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পক্ষে জোরাল সওয়াল করলেন শীতলকুচির বিজেপি বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মন। তাঁর অভিযোগ, বঞ্চনার থেকে রেহাই পেতেই এই দাবিকে সমর্থন। যদিও এর সঙ্গে সহমত নয় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।


শুধু তাই নয়। এদিন জন বার্লার দাবিকেও ইঙ্গিতপূর্ণ সমর্থন করেন তিনি। বরেনচন্দ্র বর্মন বলেন, উনি (জন বার্লা) সাধারণ মানুষের মতামতকে সমর্থন জানিয়েছেন, আপনার কী মত? আমরা সাধারণ মানুষের দাবিকে সমর্থন করি।


বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এরপরও উত্তরবঙ্গ নিয়ে কেন এই দাবি তুললেন শীতলকুচির বিজেপি বিধায়ক? 


জবাব দিয়েছেন বরেনচন্দ্র বর্মন। বললেন, গোটা উত্তরবঙ্গে মানুষের মনের দাবি, উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ, স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত আছে। কোনও বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, হাসপাতাল নেই, উত্তরবঙ্গের মানুষ পরিত্রাণ চায়। মনের দাবি, উত্তরবঙ্গে কোনও উন্নয়ন নেই, তাই আজ এই দাবি উঠেছে।


যদিও, বরেনচন্দ্র বর্মনের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন না উত্তরবঙ্গের দলের আরেক বিধায়ক। কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলচন্দ্র দে বলেন, আমাদের রাজ্য সভাপতি আগেই এই ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, আমরা আলাদা রাজ্যের পক্ষে নই।


বঙ্গভঙ্গ বিতর্কে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বার্তা দেওয়ার পরও কেন ফের উত্তরবঙ্গের দলীয় বিধায়কদের একাংশ ফের এই দাবি তোলায় খোঁচা দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। 


কোচবিহার তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বকে প্রশ্ন, আপনারা অবস্থান স্পষ্ট করুন, নতুন করে অশান্তি তৈরির এই যে বাতাবরণ বিজেপি করছে, তাতে দ্বিচারিতা স্পষ্ট।


রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর-পরই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার দাবিতে সরব হন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। যিনি এখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী।


বার্লার দাবির পক্ষে মুখ খোলেন উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। এবার শীতলকুচির বিজেপি বিধায়কের দাবি ঘিরে বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিয়েছে।


এপ্রসঙ্গে, তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ভোটের আগে একথা বললেন না কেন? আসলে আপনারা জানেন ভোট পেতেন না, এটা একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, ইচ্ছাকৃতভাবে একথা বলা হচ্ছে।


পৃথক গোর্খাল্যান্ড থেকে কামতাপুর - বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গ। এবার শীতলকুচির বিজেপি বিধায়কের দাবি ঘিরে ফের তপ্ত হচ্ছে উত্তরের রাজনীতি।