পূর্ব বর্ধমান: কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক দুদুটি ভ্যাকসিন গতকালই রাজ্যে চলে এসেছে। এবার রাজ্যের জেলায় জেলায় সেগুলি সরবরাহ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে সেই প্রক্রিয়া বাধা পেল অবরোধের কর্মসূচির জেরে। রাজ্য়ের মন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের পরিচিত মুখ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির দলের লোকজনের অবরোধের জেরে ভ্যাকসিন নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া ধাক্কা খেল বুধবার। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গলসির গলিগ্রামে অবরুদ্ধ জাতীয় সড়কে কিছুক্ষণ আটকে রইল করোনা ভ্যাকসিনের গাড়ি। ঘুরপথে নিয়ে গিয়ে বের করতে হল পুলিশকে।
গ্রন্থাগারমন্ত্রী ও জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের নেতা সিদ্দিকুল্লা।
দেশের নানা জায়গায় প্রায়ই গ্রিন করিডর তৈরি করে অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী মূমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে বিমানে বা অ্যাম্বুলেন্সে হার্ট বা অঙ্গপ্রতঙ্গ পৌঁছে দেওয়ার ঘটনার কথা শোনা যায়, যা বলাই বাহুল্য প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু আজ যা ঘটল তা নিঃসন্দেহে লজ্জা ও নিন্দার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতাকে ছাপিয়ে যাওয়া করোনা অতিমারীর ভ্যাকসিনকে যখন সভ্যতার লাইফ লাইন হিসেবে দেখা হচ্ছে, তখন রাস্তা অবরোধে ভ্যাকসিন আটকে পড়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক।
ইতিমধ্যেই এর নিন্দা শুরু হয়েছে। বিজেপি শীর্ষনেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ট্যুইট করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পূর্ব বর্ধমানের গলসীতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।এজন্য অনেকক্ষণ রাস্তা অবরোধ হয়ে ছিল। সাধারণ লোকজন এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। মন্ত্রীকে লাঠি হাতে লোকজনকে মারতে দেখা গিয়েছে। সিদ্দিকুল্লাকে গ্রেফতারের দাবি জানান বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, মানুষ যার অপেক্ষায়, তাকে আটকে দিচ্ছে কী বলব! মমতাকে অনুরোধ, মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিন ওঁকে।
যদিও বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত আখ্য়া দিয়ে সিদ্দিকুল্লার সাফাই, ভ্যাকসিন আসার খবর আগে থাকতে জানানো হয়নি। অ্যাম্বুল্যান্স, রোগীর গাড়ি সবই ছেড়েছি। পিছন দিকে একশো দুশো গাড়ির পিছনে ভ্যাকসিনের গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়।
পাশাপাশি যে ইস্য়ুতে তাঁর দল অবরোধ করেছে, তার পক্ষে তিনি সওয়াল করেন, ভ্যাকসিনের যতটা গুরুত্ব, তার চেয়ে ভারতীয় মানুষের জীবন জীবিকার গুরুত্ব অনেক বেশি। ৯৫ কোটি মানুষের রুটিরুজির কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে।
এদিকে বাগবাজারে স্বাস্থ্য দফতরের ভ্যাকসিন স্টোর থেকে আজই রাজ্যের সব জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে করোনার টিকা কোভিশিল্ড। আগামীকাল কলকাতায় বণ্টন করা হবে করোনার টিকা। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যে ৬ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫০০ জনের টিকাকরণ হবে। রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও টিকাকরণের দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। মোট ১১ হাজার ১২০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সবথেকে বেশি ভ্যাকসিন কলকাতার জন্য বরাদ্দ হয়েছে। টিকাকরণ হবে ৯৩ হাজার ৫০০ জনের। ২ নম্বরে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় ৪৭ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। ৩ নম্বরে থাকা মুর্শিদাবাদে টিকাকরণ হবে ৩৭ হাজার ৫০০ জনের। কো উইন অ্যাপে প্রথম পর্যায়ের করোনার টিকাকরণ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
এই প্রথম করোনার টিকাকরণ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছে স্বাস্থ্য দফতর। বেসরকারি হাসপাতালগুলির স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতে ওই হাসপাতালেই টিকা দেওয়া যায়, মূলতঃ তা নিয়ে আলোচনা হবে। বিকেল ৪টেয় এই বৈঠক হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌমিত্র মোহনের নেতৃত্বে এই বৈঠকে যোগ দেবেন সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। প্রতিটি হাসপাতালের তরফে ২ জন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। এদের মধ্যে একজন প্রশাসনিক প্রধান, আরেকজন কোভিড টিকাকরণ প্রক্রিয়ার নোডাল অফিসার। কীভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে টিকাকরণ হবে, তার পরিকাঠামো ও টিকাকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে।