দার্জিলিং: বারবার পাহাড় সফরে গিয়ে একাধিক উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সেই সব উন্নয়ন পর্ষদের সব প্রতিনিধিদের পদ না ছাড়লে পাহাড় বিরোধী তকমা দেওয়ার হুমকি দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ের যে বাসিন্দারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পুরষ্কার পেয়েছেন, তাও ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মোর্চা।
এদিন মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ১৪ জুলাই সন্ধে ৬টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে উন্নয়ন পর্ষদের পদাধিকারীদের পাহাড় বিরোধী তকমা দেওয়া হবে। পাহাড় আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল ঠিক করতে মোর্চার ডাকে এদিন ফের বৈঠকে বসে সমন্বয় কমিটি। ঠিক হয়--
- সরকার তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত পাহাড়ে বনধ চলবে।
- ১৩ জুলাই দেশজুড়ে কবি ভানুভক্তের জন্মজয়ন্তী পালন করে আন্দোলনকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
- পরদিন, ১৪ জুলাই দার্জিলিঙের জেলাশাসক, এসডিও এবং বিডিও অফিস ঘেরাও করা হবে।
- ১৫ তারিখ থেকে শুরু হবে আমরণ অনশন।
মোর্চার দাবি, তাদের এই অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা দিয়েছে হিল বিজেপিও। পাহাড়ের দলগুলির পাশাপাশি মঙ্গলবার মিরিকে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগ দেয় এনসিপিও।
এদিকে, মোর্চার সর্বাত্মক বনধের ২৬ তম দিনেও উত্তপ্ত পাহাড়। এবার অশান্তির আগুনে ভস্মীভূত জিটিএ-র যুব ও ক্রীড়া দফতর। পাহাড় অশান্তি চলতে থাকলেও, শীঘ্রই সেখানে শান্তি ফিরবে বলে, এদিন দিঘার সভা থেকে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, অচিরে শান্তি ফিরবে পাহাড়ে। কেন্দ্র আগুন জ্বালাচ্ছে।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মঙ্গলবারও পথে নামে মোর্চা। প্রথমে সিংমারি থেকে চকবাজার পর্যন্ত কুকরি হাতে মিছিল। তারপর সেখানেই জনসভা হয়।
এদিকে, এদিন পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার।
সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে বলেন, এটা হচ্ছেটা কী? পাহাড়ে লাগাতার বন্ধ চলছে, অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই। রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই জায়গায় দুই ভিন্ন দল ক্ষমতায় বলেই কি দুর্ভোগের শিকার হতে হবে রাজ্যবাসীকে?
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী বলেন, রাজ্যে কোনও অতিরিক্ত বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয়। যে বাহিনী আছে, তা যথেষ্ট। তাদেরকেই ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্যের সমন্বয়ের অভাব আছে। পাশাপাশি, কোথায় কোথায় রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে, সেবিষয়েও কেন্দ্রকে তথ্য দিচ্ছে না রাজ্য।
পাশাপাশি, মদন তামাং হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানতে চান, সিবিআই কী করছে? মদন তামাং হত্যাকাণ্ডে তাদের যা করা উচিত ছিল, তা করলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকত। অভিযুক্তদের সমতলে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। অপর বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এরপরই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, আগামী শুক্রবারের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন আধিকারিক হলফনামা দিয়ে জানাবেন, রাজ্যের বাহিনী বদলের আর্জির কোনও উত্তর তাঁরা দিচ্ছেন না কেন? একইসঙ্গে রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা হলফনামা দিয়ে জানাবেন, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের আধিকারিকদের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে।