নয়াদিল্লি: সতর্ক করেও কাজ না হলে, রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে দীনেশ ত্রিবেদীকে। যদিও, কড়া ব্যবস্থার মুখেও, নিজের অবস্থানে অনড় দীনেশ ত্রিবেদী। বললেন, যা কিছু করেছি বা বলেছি, সবই দলের স্বার্থে। অবস্থান থেকে সরব না।
নারদ-বিদ্ধ নেতা-নেত্রী হোক বা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ছবি জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন --- কারও বিরুদ্ধেই এখনও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তৃণমূলকে। অথচ, দীনেশ ত্রিবেদী কোপে! সেই দীনেশ ত্রিবেদী যিনি কিনা নানা সময়ে, ঘুরিয়ে সরব হয়েছেন নারদ-ইস্যুতে! সূত্রের খবর, তৃণণূলের সংসদীয় বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথমে দলের তরফে সতর্ক করা হবে দীনেশ ত্রিবেদীকে। তাতেও কাজ না হলে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে।
প্রসঙ্গত, এই সেপ্টেম্বরেই এই পদে দীনেশ ত্রিবেদীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে কি মেয়াদ শেষের আগেই পদ থেকে সরানো হতে পারে তাঁকে? প্রশ্নটা রাজনৈতিক মহলে ঘোরা ফেরা করলেও, এ নিয়ে বিশেষ একটা মাথা ঘামাতে নারাজ ব্যারাকপুরের সাংসদ। প্রতিবাদের পথে অনড় থেকে তাঁর মন্তব্য, মা-বাবা এবং শিক্ষকদের কাছে আমি যে শিক্ষা পেয়েছি, তার সঙ্গে কোনওদিনও আপোশ করব না। আমি শুধু আমার বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ। অন্য কারও কাছে নয়। আমি যা কিছু করেছি বা বলেছি, সবই দলের স্বার্থে। আমার অবস্থান থেকে আমি সরব না। আমার মনে কোনও দ্বিধা নেই। তবে, সূত্রের দাবি, রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হতে পারে, এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠমহলে দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, রেলমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর সময়ই মাথা ঘামাইনি। এই পদে আর কি আসে যায়!



কিন্তু, খোদ নারদ নিউজের সিইও যাঁর সম্পর্কে বলেছেন, যে স্টিং অপারেশনের জন্য ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তিনি দেখা করেননি, সেই দীনেশের বিরুদ্ধে হঠাত্‍ কেন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দল? বিরোধীদের দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে তাঁর নারদ-প্রতিবাদ। বণিকসভার অনুষ্ঠানে দীনেশ ত্রিবেদী বলেছিলেন, আমি যদি দলের সভাপতি হতাম, তাহলে বলতাম, আপনারা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করার পরই আসুন। স্পষ্ট করে বলুন, ঠিক কী ঘটেছিল। যতদিন না নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন, ততদিন ঘরে বসে থাকুন। এখানেই শেষ নয়! পঞ্চম দফার ভোটের আগের রাতে হালিশহর এক শিশুকে মারধর করা হয়। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দিকে। এই ঘটনারও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী।
কিন্তু, যাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সূত্রের দাবি, সেই দীনেশ ত্রিবেদীকে বৈঠকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। জোটের জয়ের কথা বলেছেন কি না এই প্রশ্ন করা হলে, দীনেশ বলেন, ভোট আসবে যাবে। হারজিত লেগেই থাকবে। দেখতে হবে রাজনীতিতে আমাদের আদর্শ কী? সেটাই আসল। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পরে ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, বিকেলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি জোটের জেতার কথা বলেছেন কিনা? জবাবে দীনেশ বলেন, তিনি এমন কিছু বলেননি। এই বিভ্রান্তি দলের এক সাংসদ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। তিনি শুধু বলেছেন, যেই জিতুক ভাল ভাবে জিতবে। দীনেশের দাবি, সুদীপ বলেন, এই কথাও বাইরে না বলতে।
প্রসঙ্গত, মুকুল রায় এবং সৌগত রায় ছাড়াও, মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাকলি ঘোষদস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দার। যে পাঁচজনের প্রত্যেকেই নারদে স্টিং-বিদ্ধ! বিরোধীরা কটাক্ষের সুরে বলছে, যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, সেই তাঁরাই কিনা ব্যবস্থা নিতে বৈঠক করছেন দীনেশ ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে! নারদ-ইস্যুতে দলের উল্টো লাইনে সরব হওয়াতেই কি এ ভাবে কোপে দীনেশ? প্রশ্ন বিরোধীদের। বিরোধীদের আরও কটাক্ষ, দীনেশ ত্রিবেদী শুধু তাঁর বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ বলেই এ ভাবে তাঁকে দলের ব্যবস্থার মুখে পড়তে হল। কারণ, তৃণমূলে বিবেক কোথায়!