কলকাতা:  মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের মারণ-কারবারে চাঞ্চল্যকর তথ্য! পুলিশের হাতে যা তথ্য উঠে এল, তা রীতিমতো উদ্বেগের! লালবাজার সূত্রে দাবি, তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কলকাতা ছাড়িয়ে এই চক্রের জাল পৌঁছেছে জেলায়-জেলায়! অর্থাত, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ওষুধ, রিপ্রিন্ট হয়ে চলে গিয়েছে জেলার দোকানগুলিতেও!
পুলিশ সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত এরকম ৫টি জেলা চিহ্নিত করতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। চিহ্নিত করা হয়েছে কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটারকেওও।
শনিবার, বড়বাজার থেকে পল্টু হাজরা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্রের দাবি, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ধৃত ব্যক্তি এই চক্রে মিডল ম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এক্সপায়ারড ওষুধ রিপ্রিন্ট হওয়ার পর, তাঁর মাধ্যমেই, ছড়িয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়!
গত ৯ মার্চ লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করেন স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোলার। তার ভিত্তিতে, তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়,
ওষুধের হোলসেলার, হাওড়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা রিনেস সারোগি এবং বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিটের ছাপাখানার মালিক পবন ঝুনঝুনওয়ালা।
কিন্তু যেসব ওষুধের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে, সেই সব ওষুধ বাজারে কীভাবে চালানো হত? পুলিশ সূত্রে দাবি, ২ নামী ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কিনতেন হোলসেলার রিনেস সারোগি। তারপর সেই সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাঠিয়ে দেওয়া হত ক্যানিং স্ট্রিটের এই ছাপাখানায়। সুকৌশলে ওষুধের স্ট্রিপ বা শিশি থেকে নেলপালিশ রিমুভার দিয়ে মুছে দেওয়া হত এক্সপায়ারি ডেট! অর্থাত, কোনও ওষুধের এক্সপায়ারি ডেট লেখা রয়েছে....জানুয়ারি ২০১৭....সেটাই করে দেওয়া হত ২০১৯!
এভাবেই নতুন মোড়কে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হত মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ! সেই ওষুধই কিনতেন সাধারণ মানুষ। এর নেপথ্যেও ছিল বিপণনের কৌশল। পুলিশ সূত্রে দাবি, নতুন তারিখ দেওয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ছাপাখানা থেকে ফিরে যেত হোলসেলার রিনেস সারোগির কাছে। এরপর অসাধু স্টকিস্টকে ওই ওষুধ দিয়ে দিতেন রিনেস। সেখান থেকে দোকানে দোকানে পৌঁছে যেত মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ। তারপরই সেই সব ওষুধ চলে যেত সাধারণ মানুষে হাতে।
জালিয়াতির এই কারবারের কুশীলব কোনও একজন ব্যক্তি বা কোনও এক সংস্থা নয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নেপথ্যে রয়েছে একটা বড়সড় চক্র! সেই মডিউডেরই হদিশ পেতেই চাইছে লালবাজার!