কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, দলের নামে চাঁদা তোলা যাবে না। সেই বার্তাকে অগ্রাহ্য করে রাজপুর-সোনারপুরে চাঁদার নামে জুলুমবাজির অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই জুলুমবাজির শিকার রাজপুর-সোনারপুরের এক জিম মালিক।

জিম মালিকের দাবি, তৃণমূলের বিজয় দিবসের জন্য চাঁদা দিতে অস্বীকার করা থেকেই গোটা ঘটনার সূত্রপাত।

রাজপুর সোনারপুর পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে কদমতলা মোড়ে জিম চালান রঞ্জিত মণ্ডল। তাঁর দাবি, ৫ জুন সাত-আটজন তৃণমূলকর্মী তাঁর কাছে এসে কুড়ি হাজার টাকা চাঁদা চান। তিনি এক হাজার টাকা দিতে চাইলেও, তৃণমূলকর্মীরা তা নিতে চাননি। এই ছবি ধরা পড়ে জিমের সিসিটিভি ক্যামেরায়।

জিম মালিকের দাবি, এরপর ১৯ জুলাই রাতে তৃণমূল নেতা সঞ্জীব সরকার সহ কয়েকজন জিমে চড়াও হন। সেখানে তখন জিম মালিক রঞ্জিত মণ্ডল এবং ট্রেনার সুমন দত্ত ছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সঞ্জীব সরকার জিমে ঢুকে মালিককে সপাটে একটি চড় মারেন।

এরপর বাকিরা জিমের ট্রেনার সুমন দত্ত এবং জিমের মালিক রঞ্জিত মণ্ডলকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বার করে নিয়ে যায়।

জিমের অন্যান্য সদস্যদের অভিযোগ, তৃণমূলকর্মীরা এতটাই মারমুখী ছিলেন যে, তাঁরা এগিয়ে যেতেও সাহস পাননি।

সোনারপুর থানায় পাঁচজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন জিম মালিক রঞ্জিত মণ্ডল। জমা দিয়েছেন সিসিটিভি ফুটেজও। তবে যে সঞ্জীব সরকারকে সিসিটিভি ফুটেজে চড় মারতে দেখা গিয়েছে, তাঁর নাম এফআইআরে নেই। তিনি রঞ্জিত মণ্ডলকে টেনে বার করার কথা স্বীকার করলেও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আরেক অভিযুক্ত বাবুলাল দেবনাথও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ পাঁচ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির হুমকি, মারধর, আটকে রাখার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে।

যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে, জিমের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

সেখানে জোরে গান চালানো বা সদস্যদের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্তরা।

যদিও, অন্য জিমের প্রশিক্ষকদের বক্তব্য, জিমে অ্যারোবিকসের সময় মিউজিক বাজে।এরমধ্যে মধ্যে কোনও অস্বাভাবিককত্ব নেই।

এই জিমের সদস্যদের পোশাক নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্তরা।

এই বক্তব্যের মধ্যেও কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না জিম প্রশিক্ষকরা।

জিমের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে মারধরের ছবি ধরা পড়েছে।

হুমকি, মারধর, আটকে রাখার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যদিও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

এই ঘটনায় চরম আতঙ্কে ভুগছেন জিম মালিক। এমনকী, সিসিটিভি ক্যামেররার ফুটেজে যে সঞ্জীব সরকারকে মারধর করতে দেখা গিয়েছে, তাঁর নাম তিনি অভিযোগপত্রে পর্যন্ত রাখতে সাহস পাননি। কেন?

তৃণমূল নেতা সঞ্জীব সরকারের দিদি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান। এলাকায় কান পাতলে তাঁর দাপটের কথাও শোনা যায়। তবে তিনি অবশ্য আত্মসমর্থনে এফআইআরে নাম না থাকার বিষয়টিকেই হাতিয়ার করেছেন।

তবে এই তৃণমূল নেতা যাই বলুন, এলাকায় তাঁদের দাপট যে কতটা সেটা বোঝা যায় রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের কথাতেই।

জিম মালিককে মারধর, হুমকির ঘটনায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগকারী জিম মালিকের দাবি, এরা প্রত্যেকেই তৃণমূলকর্মী।

সোমবার সকালে এই অভিযুক্তরা ফের জিমের সামনে জড়ো হন। পাল্টা অভিযোগ তুলতে শুরু করেন, জিম বেআইনিভাবে চলছে।

এমনকী, জিমের আড়ালে অশ্লীল কাজকর্ম চলছে বলেও অভিযোগ করেন অভিযুক্তদের কেউ কেউ।

যদিও, জিম মালিক এবং জিমের মহিলা সদস্যদের স্পষ্ট দাবি, এখানে সর্বক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরা চলে। চাইলে তার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হোক।

নিজেদের তত্ত্বপ্রমাণের জন্য এক জিমের সদস্যকেও ধরে আনেন অভিযুক্তরা। তবে সেই সদস্য জানান, জিমে কোনও অশ্লীল কাজ হতে তিনি দেখেননি।

পুলিশ সবদিক দেখেই তদন্ত শুরু করেছে।