আসানসোল: শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শীলভদ্র দত্তর পর এবার জিতেন্দ্র তিওয়ারি! ২১-এর বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে দলে থেকে বেসুরো গাওয়া বিধায়কদের সংখ্যা!  এবার অন্য সুর পশ্চিম বর্ধমানের জেলা তৃণমূল সভাপতি, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা আসানসোল পুরসভার বিদায়ী মেয়র ও বর্তমান পুরপ্রশাসকের গলায়! শুধু বেসুরো গাওয়াই নয়, দলের বিরুদ্ধে রাজনীতির জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিতে না দেওয়ার মতো মারাত্মক অভিযোগও করেছেন তিনি!

এবার ঘাসফুল শিবিরের অস্বস্তি বাড়ালেন আসানসোল পুরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আসানসোল পুরসভাকে নিতে দেওয়া হয়নি।
আসানসোল পুরসভা বঞ্চিত, অভিযোগ জিতেন্দ্রর। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পে মনোনীত করেছিল আসানসোলকে। কিন্তু রাজ্য সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ২ হাজার কোটি টাকা নিতে পারেনি আসানসোল পুরসভা। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই ওই প্রকল্পের সুবিধা নিতে দেওয়া হয়নি আসানসোল পুরসভাকে। তাঁর অভিযোগ, পুরমন্ত্রী রাজ্য সরকারের তরফে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখা হয়নি।
সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পেও কেন্দ্রের থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আসানসোল পুরসভাকে নিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জিতেন্দ্র তিওয়ারির। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, পুরমন্ত্রী এবং পুর দফতর কেন্দ্রের ওই টাকা তাঁদের নিতে দেয়নি। পুর দফতরে একাধিক প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও তার অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আসানসোলের পুর প্রশাসকের।
তিনি চিঠিতে আর্জি জানিয়েছেন, আসানসোল পুরসভাকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। শুধু এই চিঠি পাঠানোই নয়, রানিগঞ্জ গালর্স কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন জিতেন্দ্র। যদিও চিঠিতে কারণ হিসেবে তিনি দেখান,  নিজের রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত, আগেভাগে চিঠি দেওয়াটা অত্যন্ত অন্যায়। বিজেপি হয়তো ওকে ভুল বোঝাচ্ছে।'

উত্তর দিয়েছেন জিতেন্দ্রও। তিনি বলেন, 'বিজেপি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, আমার সঙ্গে নয়। উনি যতটা মমতাকে ভালবাসেন, আমিও ঠিক ততটাই বাসি।'

এরইমধ্যে জানা গেছে, জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে ফোন করেছেন ফিরহাদ হাকিম। কাল সন্ধে ৬ ক্যামাক স্ট্রিটে বৈঠক।বৈঠকে থাকতে পারেন প্রশান্ত কিশোর, সূত্রের খবর

এদিকে এ ব্যাপারে আসানসোলের বিজেপি সংসদ তথা কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, "ফিরহাদ হাকিম সেই তৃণমূলী যিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে তাদের দলের মধ্যে আলোচনার কোনও জায়গা নেই। বাবুল সুপ্রিয় অনেক চিঠি দিয়েছেন, একটারও উত্তর তিনি দিয়েছেন? যদি পেয়ে থাকেন, আমি অনুরোধ করব একটা চিঠিকে অন্তত সামনে আনতে।''

বাবুল আরও বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমার চিঠির উত্তর দেননি। টাকাগুলো গেল কোথায়? আসানসোলকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল বড় বড় ছবি ছাড়া আর কোনও কাজ হয় না। কেন্দ্রের টাকা  কিছু নয়, সব মানুষের টাকা। প্রতিটি রাজ্য হিসেবে কেন্দ্রকে পাঠায়, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ কোনও হিসেবে দেয় না কেন্দ্রকে। সাহস করে যে জিতেন্দ্র তিওয়ারি এই কথাগুলি বলেছেন, তার জন্য আমি ওঁকে ধন্যবাদ জানাব"।

জিতেন্দ্র তিওয়ারির চিঠিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, 'আসানসোলের পুর প্রশাসক ও তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্রকাশ্যে মমতা-সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের টাকা থেকে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। এর ফলে আসানসোলের উন্নয়ন ধাক্কা খেয়েছে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি পিসির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগ করেছেন। রাজ্যের প্রতিটি শহরই ভুগছে।'