সন্দীপ সরকার, কলকাতা: দুর্গাপুজোর পর থেকেই বঙ্গে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। যা নিয়ে উদ্বেগে চিকিত্সকরা। কিন্তু উত্সবের মরসুমে রাজ্যে কতটা সংক্রমণ ছড়াল? উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটাই বা কীরকম? এসব তথ্য পেতেই সপ্তম সেন্টিনাল সার্ভেল্যান্সের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দু’দফায় রাজ্যে সেন্টিনাল সার্ভেল্যান্স হবে। ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে নমুনা সংগ্রহ। এরপর ৩০ অক্টোবর থেকে পয়লা নভেম্বর পর্যন্ত হবে নমুনা পরীক্ষা। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রোগীদের ওপর এই সার্ভেল্যান্স করা হয়।
জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো করোনার উপসর্গ বাদে, অন্যান্য সমস্যা নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, মূলত তাঁদেরই নমুনা নেওয়া হবে। প্রধানত হাসপাতালের সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, প্রসূতি বিভাগ এবং ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টের রোগীদের নিয়ে এই পরীক্ষা হবে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে উদ্বেগ; গত ২৪ ঘণ্টা রাজ্যে করোনা সংক্রমিত ৮০৫, মৃত্যু ১১ জনের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সার্ভেল্যান্সের মাধ্যমে আগামীদিনে করোনা সংক্রমণ রুখতে কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে, তারও একটা রূপরেখা পাওয়া যাবে।
রাজ্যের সব জেলার ২৮টি কেন্দ্র থেকে এই সেন্টিনাল সার্ভেল্যান্সের কাজ হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্র থেকে ৪০০ করে মোট ১১ হাজার ২০০ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কলকাতায় নমুনা সংগ্রহের কাজ হবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পুজো মিটতেই পশ্চিমবঙ্গে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের গ্রাফ। বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুও। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, এবছর পুজোর ১০ দিন আগে ১ অক্টোবর কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হন ১৪৬ জন। ২ অক্টোবর সেই সংখ্যা ছিল ১৪৯। ৩ অক্টোবর দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫।
কিন্তু পুজো মিটতেই, দ্বাদশীতে কলকাতায় আক্রান্ত হন ১৭৯। পরের দিনগুলিতে ক্রমশ দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সব মিলিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৪ জন। মৃত্যু হয়ছিল ১৯ জনের।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা বাড়তেই কঠোর প্রশাসন, মাস্ক না পরলেই চলছে ধরপাকড়
আর পুজোর পর তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১ হাজার ২৬৭। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। আর চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম তিনদিনেই কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮৩।
আর মারণভাইরাসের এই যে বাড়বাড়ন্ত, তা শুধু কলকাতায় নয়, দেখা দিয়েছে গোটা রাজ্যেই। ১৬ অক্টোবর, একাদশীর দিন রাজ্যে করোনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৪৩। মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের।
ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শেষবার ৪ জুলাইয়ে রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাজারের ঘরে।
আরও পড়ুন: পরিবার থেকে বহুতল, করোনা মোকাবিলায় মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনে জোর কলকাতা পুরসভার
চিকিত্সকরা বলছেন, এটা একেবারে খাল কেটে কুমীর আনার মতো। করোনার সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল, তাকেই আবার বাড়িয়ে তোলা হয়েছে।