হাওড়া: ‘রাজনীতি থেকে আপাতত সরছি, ময়দান ছাড়ছি না।’ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে দাবি লক্ষ্মীরতন শুক্লার। তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল। যদিও, লক্ষ্মীরতন শুক্লার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছে বিজেপি।


মঙ্গলবার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং তৃণমূলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে দেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। বৃহস্পতিবার প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা!


বিস্ফোরক কিছু বললেন না! তবে তিনি যে ফের কামব্যাকও করতে পারেন, সেই ইঙ্গিতও কিন্তু কিছুটা হললেও মিলল। বললেন, খেলাতেই মনোযোগ দিতে চাই। রাজনীতি থেকে আপাতত সরলাম। কিন্তু আমি ময়দান ছাড়ছি না। এখনও বিধায়ক পদ ছাড়িনি, রাস্তায় বেরোব। ক্রীড়া ক্ষেত্রে কাজ করে যাব।’


লক্ষ্মীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ভাল ছেলে। সঠিক কথাই বলেছে। রাজনীতির বাইরে থেকেও তো কাজ করা যায়।


কিন্তু, খেলার ময়দান থেকে রাজনীতির ময়দানে নামার পর হঠাৎ‍ কেন আপাতত সেই রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত! লক্ষ্মীরতনের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে দাবি, মন্ত্রী হিসাবে কিংবা সভাপতি হিসাবে তাঁকে কেনও কাজই দেওয়া হয়নি! তাঁর কোনও সিদ্ধান্তকেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি!


যদিও, সাংবাদিক বৈঠকে পদত্যাগের কারণ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি লক্ষ্মী। বলেন, আমি দলের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে বাইরে কিছু বলব না। আমি দায়িত্ব পাওয়ার কয়েকদিন পরেই যেখানে যা জমা করার তা করে দিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু বলব না।


প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। ক্রীড়াবিদ হিসেবেই আমার সবথেকে বড় পরিচয়। বিধায়ক পদে পূর্ণ সময় থাকব।’


লক্ষ্মীর পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল হাওড়া তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, লক্ষ্মীরতন চলে যাওয়ায় কোনও ক্ষতি হবে না। এপ্রসঙ্গে এদিন লক্ষ্মী বলেন, যে আমার সম্পর্কে যা বলছেন, আমি তাঁদের আমার শ্রদ্ধা জানাই।


লক্ষ্মী মনে করিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক থাকবে। আমি ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছি না। রাজনীতি ছাড়াও জনগণের সেবা করা যায়।


তবে সাংবাদিকের বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার তাৎ‍পর্যপূর্ণ একটি ফেসবুক পোস্ট করেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। ছবিটা আঁকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া টিমের জার্সি গায়ে সৌরভ ও লক্ষ্মীরতন নিজে। মহারাজ তাঁর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি পোস্ট করে লক্ষ্মীরতন লিখেছেন ‘একজন সত্যিকারের নেতা, অধিনায়ক। যিনি শুধু নিজেই খেলেন না। গোটা টিমকে খেলতে উদ্বুদ্ধ করেন।


লক্ষ্মীরতন নিজে পোস্টের মধ্যে আলাদা কোনও তাৎ‍পর্য না দেখলেও, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কথা কিন্তু নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেন, এবার সৌরভ ও লক্ষ্মীরতন শুক্লা একসঙ্গে ব্যাট করবে। এপ্রসঙ্গে লক্ষ্মীর জবাব, সৌরভের সঙ্গে এতদিন খেলেছি। সৌরভ খুব বড় নেতা। একটা ছবি পোস্ট করতে পারব না!


যদিও, এদিন লক্ষ্মী সাফ জানিয়েছেন, তিনি কোথাও যোগদান করছেন না। বলেন, ‘রাজনীতি থেকে আপাতত সরছি। কোথাও যোগদানের প্রশ্ন নেই। সব কথা প্রকাশ্যে বলতে চাই না।’


এদিন অত্যন্ত বাছা বাছা কৌশলী শব্দ ব্যবহার করলেন লক্ষ্মীরতন। বললেন, ‘বিরোধী দলের নেতাদের উপরেও কোনও ক্ষোভ নেই। রাজ্যে আমরা হিংসা দেখতে পছন্দ করি না। সমাজে বিভেদ কখনই কাম্য নয়। হিংসা থেকে সকলে দূরে থাকুন। ক্রীড়াবিদ হিসেবে সব রাজনৈতিক দলকে সম্মান জানাই।’


লক্ষ্মী জানিয়ে দেন, ‘হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতিকে তিনি সমর্থন করেন না।’ বলেন, ‘ময়দানে যে ভাল খেলে সেই জেতে। রাজনৈতিক দল ভোটে জেতে কাজের জন্য। সব রাজনৈতিক দলের জন্যই শুভেচ্ছা রইল।’