কলকাতা: ডিভিসি-র ছাড়া জলে রাজ্যের ৮টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত। শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে কেন্দ্রকেই সরাসরি দুষলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি যে এইভাবে বন্যা 'ম্যান মেড প্ল্যান'। যে ভাবে জল ছাড়া হয়েছে তা বড় অপরাধ। এত জল আগে কখনও ছাড়া হয়নি। এটা ম্যান মেড ক্রাইম। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


তিনি বলেন, "বর্ষা অনেক হয়েছে। আসানসোলে ৩৫০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলাম কারণ অনেক পুকুর আগেই কেটে রেখেছিলাম। কিন্তু এরপরও কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল জেলাগুলি? এক বছরে চারবার যদি ইচ্ছে করে জল ছেড়ে বন্যা করে দেয়, এরপর বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বৃষ্টি, বাজ পড়ছে আগের থেকে অনেক বেশি। বারবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছি। আবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেব। কতবার ডিভিসি আমাদের ভাসাবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথায় কথায় মানবাধিকার কমিশন পাঠান। কিন্তু ডিভিসি জল ছেড়ে বানভাসি করলে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন না কেন?" 


মমতার সাফ কথায়, দরকার পড়লে ডিভিসি আমাদের টাকা দিক। জুলাই থেকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা সামলেছি। কেন্দ্র থেকে কোনও টাকা পায়নি। কিচ্ছু দেয়নি। তাও আমরা রাজ্য সরকারের তরফে চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই জল ছাড়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে যেই জল বাড়ল ওমনি সব বাংলার দিকে ঠেলে দিয়ে ভাসিয়ে দিল। আমাদের লোকেদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিল। ঝাড়খণ্ড আমাদের বন্ধু সরকার। আমি অনুরোধ করব যেন ওঁরা বাঁধগুলো ঠিকমতো মেরামত করে।  এখন ডিভিসি, কেন্দ্র সব হাতগুটিয়ে বসে আছে। 


আরও পড়ুন, 'বন্যার জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী, কুর্শি বাঁচাতে ৫০ লক্ষ মানুষকে বিপদে ফেলেছেন', মমতাকে আক্রমণ শুভেন্দুর


এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের উচিত মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা। ঝাড়খণ্ড সরকারকে অনুরোধ আমাদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করুক। প্রতিবার ডিভিসি জল ছেড়ে আমাদের ডোবাবে। খাল, পুকুর, ড্যাম কিছুই সংস্কার করবে না। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স। কেন্দ্রকে বলব অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, "কিছু হলেই মানবাধিকার কমিশন পাঠান, উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশাল পুলিশ পাঠান, বিজেপির চুনোপুটি ক্যাডারকে ৪০ জন সুরক্ষা কর্মী দেন, অফিসারদের চমকান, আর যখন জলে বাংলা জলমগ্ন তখন এক পয়সাও ছাড়েন না কেন? মুখে বড় বড় কথা। বাংলার মানুষ দুঃখে আছে।" 


এদিন এর আগে ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে কপ্টারে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। নামেন আরামবাগে। কথা বলেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যকে না জানিয়ে সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। ড্রেজিং করলে ডিভিসি-র জলাধারে আরও বেশি জল ধরত। ডিভিসি-র ছাড়া জলে ক্ষতিগ্রস্ত একলক্ষ বাড়ি। চারলক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে।