কলকাতা ও নয়াদিল্লি: স্বঘোষিত গোরক্ষকদের তাণ্ডব নিয়ে রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই বল আবার সপাটে দিল্লির কোর্টে ফেরত পাঠালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোপ দাগলেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে।  বললেন, আগে ওদের হনুমানগুলোকে সামলাক। ল্যাজে আগুন দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। দাঙ্গা করবে ওনারা, আর তা সামলাবে রাজ্যগুলি!


পাল্টা রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি হিংসার ঘটনা ঘটছে। সারা ভারতে গোরক্ষা বাহিনীর হাতে কতজন খুন? এখানে রাজনৈতিক হিংসার বলি কত? পরিস্থিতি  নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ। তাই আঙুল তুলছে কেন্দ্রের দিকে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও দায় ঠেলেছেন রাজ্যগুলির ঘাড়েই। তিনি বলেছেন, এটা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা। রাজ্যগুলিকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিরোধীরা পাল্টা বলছে, বিজেপি শাসিত একের পর এক রাজ্যেই তো গোরক্ষার নামে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে।

পেহলু খান খুন হন রাজস্থানে। সেখানে বিজেপি সরকার।

জুনেইদ খান খুন হন হরিয়ানায়। সেখানেও বিজেপি সরকার।

মহম্মদ আলিমুদ্দিনকে পিটিয়ে খুন করা হয় ঝাড়খণ্ডে। সেখানেও বিজেপি সরকার।

মহারাষ্ট্রের নাগপুরে গোমাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ফেলে পেটানো হয় ইসমাইলকে। সেখানেও বিজেপি সরকার।

অসমেও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও গবাদি পশু নিয়ে যাওয়ার সময় বেধড়ক মারধর করা হয়।সেখানেও বিজেপি সরকার।

গুজরাতের উনায় গরু নিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের ছেলেদের বেধে পেটানোর এই ছবিও তোলপাড় ফেলেছে।সেখানেও বিজেপি সরকার!

আর এসবের মধ্যেই রবিবার সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাজ্যের দায়িত্ব। কেউ গোরক্ষার নামে আইন হাতে তুলে নিলে, রাজ্য সরকারকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। গোরক্ষার নামে কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাচ্ছে।  এবিষয়ে নজর রাখতে হবে রাজ্য সরকারকে।

বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ, হচ্ছে তো বিজেপি শাসিত রাজ্যে! কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো নিজের ঘরই সামলাতে পারছেন না।

সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বটে, কিন্তু প্রভাব পড়ছে না। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। আখলাক খুনের সময় বলা উচিত ছিল।

সব মিলিয়ে গোরক্ষা ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে।

এই বিতর্কেই মোদী সরকারকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী মীরা কুমারকে ভোট দিয়ে তাঁরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। এই ভোটের মাধ্যমেই বিরোধী শক্তিকে শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও যে দলগুলি বিজেপির পাশে রয়েছে তাদের প্রতিও বিরোধী ঐক্যে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সময় এলে বিজেপি ওই দলগুলিকেও ছাড়বে না সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, প্রতিবাদ জানাতেই হার নিশ্চিত জেনেও মীরা কুমারকে ভোট দিয়েছে তাঁর দল। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, যেই জিতুন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।