হাওড়া: এভাবেও ফিরে আসা যায়। স্বাধীনতার বছর হারিয়ে যাওয়া কিশোর ফিরে এল ৭০ বছর পর। ৮৫ বছরের নারায়ণচন্দ্রকে নিয়ে উত্সবের আবহ হাওড়ার জগত্বল্লভপুরের নস্কর পরিবারে।
কুড়ি কুড়ি বছরের পার নয়। জীবন যে গেছে চলে তিন কুড়ি বছরেও বেশি সময়। হারিয়ে যাওয়া সেই সময়কে মিলিয়ে দিয়েছে এই নিমগাছ। ৭০ বছর পর ঘরে ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া এক কিশোর।
নাম নারায়ণচন্দ্র নস্কর। বয়স ৮৫। বাড়ি হাওড়ার জগদ্বল্লভপুরের পাতিহাল গ্রামে। বৃদ্ধ জানান, বাড়ি ফেরার জন্য মন ছটফট করত। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারতাম না। নিজেও আসতে পারতাম না।
সালটা ১৯৪৭। স্বাধীনতা পেলেও অশান্তির পরিবেশ দেশজুড়ে। সেই সময়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় ১৫ বছরের নারায়ণচন্দ্র। খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে হাল ছেড়ে দেয় পরিবার। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে কিশোর তখন ট্রেনে করে পৌঁছে গিয়েছে বিহারের দ্বারভাঙায়। কিন্তু সে কাউকে বলতে পারেনি হারিয়ে যাওয়ার কথা। গ্যারেজ থেকে ইটভাটা, কারখানা থেকে অফিস-- বিহার থেকে দিল্লি, দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ। পেরিয়ে গিয়েছে বছরের পর বছর।
হঠাত্ একদিন আলাপ হয় হাওড়ারই বাসিন্দা দিলীপ দাসের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই নিজের ভিটেতে ফিরে আসা। দিলীপ বলেন, কিশোর বয়সে বাড়ি-ছাড়া। পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করি।
তিন ভাইয়ের কেউই বেঁচে নেই। বাড়ি ফেরার আগে ফোনে ভাইপোদের সঙ্গে কথা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু তাঁরা কী করে বিশ্বাস করবেন, নারায়ণচন্দ্রই তাঁদের হারিয়ে যাওয়া কাকা। নারায়ণের দাবি, তিনি তখন বাড়ির পাশে থাকা সেই নিমগাছটার কথা বলেন, যে নিমগাছের পাতা খেতে নাকি মিষ্টি লাগত। জানান, ফিরে আসতে পেরে খুব খুশি তিনি। তাঁর ভাইপো সোমনাথ নস্করও চান, কাকা তাঁদের সঙ্গে থাকুক।
প্রায় ১০০ বছরের পুরনো সেই নিমগাছটা আজও আছে। সত্যিই তার পাতা আজ যেন বেশ মিষ্টি।