কলকাতা: তাঁর স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর প্রথমবার কলকাতায় এলেন নারদ নিউজের সিইও ম্যাথ্যু স্যামুয়েল। তৃণমূলের ‘অনুদান তত্ত্ব’ উড়িয়ে তাঁর বিস্ফোরক দাবি, তাঁর পরিচয় জানার থেকে টাকা নিতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন তৃণমূল নেতারা। শুক্রবার প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর কথায়, ওরা যখন টাকা নিচ্ছিল, একবারও মনে হয়নি ওরা এটা জানতে ইন্টারেস্টেড যে আমি কোথা থেকে এসেছি, ওরা টাকা নিতেই বেশি আগ্রহী ছিল।


 

তাঁর স্টিং অপারেশন নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভোটে প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠেছে দুর্নীতি। সেই প্রেক্ষাপটেই সাংবাদিক বৈঠকে যে দাবি তিনি করলেন, তার থেকে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠে গেল, সত্যিই কি বঙ্গ রাজনীতির এতটা অধঃপতন হয়েছে? এখানকার রাজনীতি কি অর্থ সর্বস্ব হয়ে পড়েছে? তিনদিন আগে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও বলেছিলেন আজকের রাজনীতিতে মন ভয় ভরা, মাথা দুর্নীতির পাঁকে ডুবে।

 

তাহলে কি এটাই বাস্তব? স্যামুয়েলের মন্তব্য সেই প্রশ্নই উস্কে দিল আরও একবার। তৃণমূল কখনও তাঁর স্টিংকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, কখনও তাঁর স্টিং-এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খোঁজার চেষ্টা করেছে। শুক্রবার কলকাতায় স্যামুয়েলের সরাসরি চ্যালেঞ্জ, তাঁর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক থাকলে তা প্রমাণ করে দেখাক। তদন্ত হোক।

তৃণমূলের তরফে নারদকাণ্ডে একাধিকবার অনুদান-তত্ব খাড়া করার চেষ্টা হয়েছে। কখনও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

কিন্তু স্যামুয়েলের পাল্টা দাবি, তিনি কখনও অনুদান হিসাবে টাকা দেননি, ঘুষই দিয়েছিলেন। আর ঘুষ হিসাবেই তা নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। তিনি বলেছেন, কোনও অনুদান নয়, ঘুষ হিসেবেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। অনুদান হলে তো রশিদ দেওয়া হত। ঘুষ নেওয়ার ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।

বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে প্রকাশ্যে আসা নারদ স্টিংকাণ্ডের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’র অভিযোগ খাড়া করেছে শাসক দল। এদিন সেই অভিযোগ উড়িয়ে স্যামুয়েল বলেন, টাকার বিনিময়ে সবাই কাজ করবেন বলেছিলেন। তাই টাকা দিয়ে সুযোগ নিয়েছিলেন তিনি।

পাশাপাশি, নারদ নিউজের সিইও ফের প্রশ্ন তোলেন, দুবাইয়ে অফিস রয়েছে, সেখানে দিনে ১৫-২০ বার ফোন করতেই পারি। কিন্তু ফোন কলের রেকর্ড কী করে গেল শাসক দলের সাংসদের হাতে?

 

পঞ্চম দফার ভোটের আগে কলকাতায় এসে স্যামুয়েলের এই মন্তব্য শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়াল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।