কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই সারদা, নারদ ও রোজভ্যালি নিয়ে ফের তৃণমূলকে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে বিজেপি। যা ঘিরে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র বাকযুদ্ধ।
বর্ধমানে রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে জনসভা থেকে তৃণমূলকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, তৃণমূল বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে। আগে কেউ বিজেপির কথা বলতন না। এখন সবার মুখে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও বিজেপির নাম। আগে বলা হত এ রাজ্যে বিজেপি কই? এখন বলা হচ্ছে সিপিএম-কংগ্রেস কই?
শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের প্রধান হাতিয়ার কী হতে চলেছে, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়! এদিন তিনি নরেন্দ্র মোদীকে উদ্ধৃত করে দাবি করেন, সারদা-রোজভ্যালিকাণ্ডে দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে ঢোকাতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গলায় যখন সারদা-নারদের তদন্তের কথা, তখন দিলীপ ঘোষের সুর আরও চড়া। তিনি বলেন, ওদের কয়েকজন ওড়িশায়, কয়েকজন এখানে (জেলে রয়েছে)। আরও লোক ওয়েটিংয়ে আছে। তাঁর দাবি, নারদ মামলায় পঞ্চায়েত ভোটের আগেই তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা জেলে যাবেন।
রাহুল সিংহের গলায় আবার চিটফান্ড কাণ্ডে আরও হেভিওয়েটদের গ্রেফতারির প্রছন্ন ইঙ্গিত।প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বলেন, আমাকে তৃণমূলের অকজন জিজ্ঞাসা করল আমার নাম সারদায় কত নম্বরে আছে? আমি বললাম সিবিআই লটারি করছে। বিজেপি নেতাদের এই সুর শুনে তৃণমূলের দাবি, এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগেই তৃণমূলের আরও নেতা জেলে যাবেন, ‘হুঙ্কার’ দিলীপের
পাশাপাশি, তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে দিলীপ বলেছেন, রাজ্যজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আর বর্তমান শাসক দলের দুর্নীতি ইস্যুকে হাতিয়ার করে আগামী ২৫ মে লালবাজার অভিযান থেকে শুরু করে বুথস্তরে দলের সংগঠনকে মজবুত করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে গৈরিক শিবির। আজ সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানালেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তিনি বলেন, সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে আগামী ২৫ মে লালবাজার ঘেরাও করবে বিজেপি। এতে শাসক দলের কর্মীরা মনোবল হারাবেন। হতোদ্যম তৃণমূল কর্মীদের মোকাবিলা করে বিজেপি পঞ্চায়েত ভোটে সাফল্য পাবে বলেও দাবি করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি।
দিলীপ আরও বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটকে কোয়ার্টার ফাইনাল ধরে নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। বলেন, দলের কাছে পঞ্চায়েত ভোট কোয়ার্টার ফাইনাল, লোকসভা ভোট সেমিফাইনাল, ২০২১-র বিধানসভা ভোট হবে ফাইনাল।
তাঁর দাবি, বর্তমানে রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি-ই। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটে সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না কংগ্রেস ও বাম। বলেন, বিজেপি সব আসনেই প্রার্থী দেবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারকে ধীরে ধীরে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে টক্কর দিতে বিজেপি যে তৈরি, তা এদিন মনে করিয়ে দেন দিলীপ। জানান, তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করবে দল। বিজেপি সভাপতি বলেন, সংগঠনকে বুথস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুথ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।তৈরি করা হবে বুথ সুরক্ষা বাহিনী।