দার্জিলিং: দার্জিলিঙে সিংলার জঙ্গলে গোপন ঘাঁটি গেড়েছিল গুরুঙ্গপন্থীরা। যেখান অভিযান চালিয়ে সকালে পুলিশ উদ্ধার করল প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। আর সন্ধেয় কালিম্পঙেও প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করল পুলিশ। রাজ্য পুলিশের দাবি, বিমল গুরুঙের সঙ্গে মাওবাদী এবং উত্তর-পূর্বের জঙ্গিগোষ্ঠী গুলির যোগ রয়েছে। তারাই অস্ত্র জুগিয়েছে।
চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা শিংলার জঙ্গল। তার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে ছোট রঙ্গিত নদী। ওপারে সিকিমের জোড়থাং, এপারে দার্জিলিং। পুলিশ খবর পায়, এই দুর্গম জঙ্গলের মধ্যেই ঘাঁটি গেড়েছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুং। আর সেই ঘাঁটিকে সুরক্ষিত করতে তৈরি করা হয়েছে আস্ত একটা অস্ত্রভাণ্ডার।
শিংলার এই জঙ্গলের কাছাকাছি লিম্বু বস্তি, লেবং, টগবর এলাকায় এখনও গুরুংপন্থীরা সক্রিয় বলে খবর। কয়েক দিন আগেও যা স্পষ্ট গিয়েছিল পুলিশি অভিযানে। গুরুঙের খাসতালুক লিম্বু বস্তিতে উদ্ধার হয়েছিল আইইডি কারখানা।
শুধু লিম্বু বস্তিই নয়, লেবং এবং টগবর জঙ্গলের কাছে থেকেও অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, নিরাপত্তক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে সিকিম থেকে বের হন গুরুং। ঘাঁটি গাড়েন শিংলার শিরুবাড়ি জঙ্গলে। যেখান থেকে এ দিন উদ্ধার হল প্রচুর অস্ত্র। রাজ্যের এডিজি আইশৃঙ্খলা অনুজ শর্মা বলেন, সিকিমে লুকিয়ে ছিল, পাহাড়ে ঢোকার চেষ্টা করছিল, সিকিমে আবার পালিয়েছে।
কিন্তু, প্রশ্ন হল দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপন করে থাকা গুরুং হঠাৎ করে দার্জিলিংয়ে ফিরলেন কেন? পুলিশ সূত্রে খবর গুরুংয়ের টাকার যোগান কমে এসেছে। তাঁর তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আগেই ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছিল। সিকিমে তাঁকে যাঁরা অর্থ জোগাতেন, তাঁদের অনেকে ধরপাকড়ের ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি, মোর্চার অন্দরেও সেই আধিপত্য আর নেই গুরুঙের।
এই পরিস্থিতিতে তাঁর নিরাপত্তা বেষ্টনীরও জোর কমেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আগে গুরুঙের সঙ্গে ৭৪-৭৫ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন। এখন তা কমে দশ-বারোয় এসে ঠেকেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই দার্জিলিঙে ঢুকে অশান্তি পাকানোর পরিকল্পনা ছিল বিমল গুরুংয়ের।
এদিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, দার্জিলিঙের পাশাপাশি কালিম্পঙেও পুলিশের উপর হামলার ছক কষেছিল গুরুংপন্থীরা। কালিম্পঙেও পুলিশের উপর হামলার ছক কষেছিল গুরুংপন্থীরা। আইইডি ও আরডিএক্স ব্যবহার করে হামলার ছক কষেছিল তারা। কিন্তু, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ সেই ছক ভেস্তে দেয়। অল্পের জন্য হাতছাড়া হন গুরুং ঘনিষ্ঠ দাওয়া লেপচা। কালিম্পঙের পেডং জঙ্গলে গুরুঙ্গদের গোপন ডেরায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে ৪৪ পিস পাওয়ার জেল এক্সপ্লোসিভ, ৬০ খানা ডেটোনেটর, ৪টি অসম্পূর্ণ পাইপ বম্ব, সিঙ্গল ব্যারেল বন্দুক ও দেশি পিস্তল।
অনুজ শর্মা বলেন, গুরুঙ্গের সঙ্গে মাওবাদী ও উত্তরপূর্বের জহ্গিদের যোগ রয়েছে। ওদের থেকেই এত অস্ত্র পেয়েছে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদীর দাবি, আর্মস গুলো দেখে মনে হচ্ছে উত্তর পূর্বের কানেকশন রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গুরুংয়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সঞ্জয় থুলুংকে অতীতে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল উত্তর পূর্বের একটি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে! সেইসময় কিছু অস্ত্রও উদ্ধার হয়। সেই সিরিজের একটি অস্ত্র এদিন উদ্ধার হয়েছে।