Narada Case: ‘সমাজের এত গভীরে যাঁদের শিকড়, তাঁদের পালানোর প্রশ্ন কোথায়?’ হেভিওয়েটদের হয়ে সওয়াল সিঙ্ঘভির

পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি হচ্ছে

Continues below advertisement

কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে ফের নারদ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে সিবিআইয়ের মামলা স্থানান্তরের আবেদনের শুনানি চলছে। 

Continues below advertisement

এদিন শুনানির শুরুতে হেভিওয়েটদের হয়ে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সওয়ালে তিনি বলেন, ‘জামিনের আবেদন বিবেচনায় ৬০০ বছরের পুরনো পদ্ধতি আছে। মূল ৩টি বিষয় বিবেচনা করেন বিচারক বা বিচারপতিরা--- পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, অসহযোগিতার কথা বিবেচনা করা হয়। বিবেচনা করা হয় তথ্য প্রমাণ লোপাটের কথাও। এই ৩টি বিষয় খতিয়ে দেখে চিদম্বরমকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সিঙ্ঘভি তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ২০১১ থেকে মন্ত্রী, ৫০ বছর ধরে বিধায়ক। ঘটনা ঘটার এতদিন পর লোপাট করার মত আর কী তথ্যপ্রমাণ বাকি আছে? এতদিন পর অসহযোগিতার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? প্রশ্ন সিঙ্ঘভির। তিনি আরও বলেন, ‘সমাজের এত গভীরে যাঁদের শিকড়, তাঁদের পালানোর প্রশ্ন কোথায়?’

এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘১৭ মে আইনমন্ত্রী নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন। তিনি কি ওখানে রোজ যান? নির্দিষ্ট এজলাসে থাকুন বা না থাকুন, তিনি আদালত চত্বরে ছিলেন। তিনি কি বিচারব্যবস্থাকে মানেন না? আদালতে গিয়েছিলেন কেন?

এতে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘এটা সাধারণ মানুষ বা রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত বিক্ষোভ নয়। এটা সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত বিক্ষোভ। প্রভাবিত হওয়ার কোনও উল্লেখ নিম্ন আদালতের বিচারক করেননি।‘

পাল্টা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে মনু সিঙ্ঘভির উদ্দেশে বলেন, ‘উদাহরণ দেখাতে পারবেন, যেখানে বিচারক বলছেন আমি প্রভাবিত হয়েছি। আমাদের তো জানা নেই।’

এর আগে, গত সপ্তাহের শুনানিত অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তাঁর সওয়ালে বলেন,  সমস্ত দিক থেকেই এটা একটা অভূতপূর্ব মামলা। চার হেভিওয়েটদের গ্রেফতারির দিন তৃণমূল সমর্থকের ভিড়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, তিনি বলেন,  সমস্ত বিষয় ছেড়ে সিবিআই শুধুমাত্র মানুষের ভিড় নিয়েই চিন্তিত।  সিবিআই কখনও গোটা ঘটনার বিশদ বিবরণে যেতে চাইছে না। কারণ তাহলে তারা অসুবিধার মধ্যে পড়বে। 

তিনি আরও বলেন, কীভাবে বিচারক বাধাপ্রাপ্ত হলেন, কীভাবে বিচারব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হল, কীভাবে বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট হলেন, কীভাবে মানুষের ভিড় এর জন্য দায়ী, তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সিবিআই-এর কাছে নেই। এরপরই এদিনের মতো, শুনানি শেষ হয়ে যায়। 

এখানে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, ১৭ মে সকালে আচমকাই  এই চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই।  প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। 

তারপর নিজাম প্যালেসে তুলে এনে তাঁদের অ্যারেস্ট মেমোতে সই করানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচ বছর আগের নারদ-মামলায় একসঙ্গে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারি সাড়া ফেলে দেয় রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু, তারপর এই বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই একের পর এক নতুন বাঁক নেয়। 

১৭ মে অর্থাৎ গ্রেফতারের দিন সন্ধেতেই চার হেভিওয়েটকে জামিন দেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই  নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছে যায় সিবিআই। রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে দেয়।  ফলে জেল হেফাজতে যেতে হয় চার হেভিওয়েটকে। 

২১ মে  চার হেভিওয়েটের জামিন-মামলার শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতভেদ তৈরি হয়।   

শেষমেশ চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিভিশন বেঞ্চে দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায়, মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। গত সোমবার পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার প্রথম শুনানি ছিল। 

কিন্তু, তার আগে রবিবার রাতেই  চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় সিবিআই। সেই আবেদনে কিছু ত্রুটি থাকায় পরদিন, সোমবার ফের নতুন করে আবেদন জানানো হয়। সেদিনই কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে জামিন-মামলার শুনানি ছিল। 

পরদিন সুপ্রিম কোর্টেও নারদ-মামলার শুনানিতে বড়সড় ধাক্কা খায় সিবিআই। চার হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলেও, সেখানে বিচারপতিদের একের পর এক কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েন সিবিআইয়ের আইনজীবী।

এরপরই হাইকোর্টে মামলা ফেরত পাঠানোর পক্ষে সায় দেন সলিসিটর জেনারেল। নিজেরা মামলা করে, নিজেরাই সেই মামলা প্রত্যাহার করে তারা। ফলে মামলা আবার ফিরে আসে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। সেই বেঞ্চই চার হেভিওয়েটের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে। 

পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে সিবিআইয়ের মামলা স্থানান্তরের আবেদনের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু, বৃহত্তর বেঞ্চের স্থানান্তর-সংক্রান্ত মামলা শোনার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত।

তিনি তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘এই মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই বৃহত্তর বেঞ্চের। স্থানান্তরের মামলার শুনানি হয় সিঙ্গল বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা বৃহত্তর বেঞ্চে থাকতে পারেন না।’

তখন  অ্যাডভোকেট জেনারেলকে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘২ বিচারপতির সহমতের ভিত্তিতেই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠিত হয়েছে। তাহলে বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানিতে অসুবিধা কোথায়?’

সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, ‘হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ মামলা বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টে বলেছিল রাজ্য।’

কিশোর দত্তকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি টন্ডনর মন্তব্য, ‘এখন আমাদের মামলা শুনতে দিন। যখন রায়দান হবে, তখন আপনার মতামত নেব। আপনার মতামত নিয়ে আমরা অবস্থান স্পষ্ট করব।’

Continues below advertisement
Sponsored Links by Taboola