কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: এ যেন জলভরা মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি! কখনও রোদ ঝলমল। কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আদালতে যখন নারদ-মামলার টানাপোড়েন তুঙ্গে উঠেছে, তখন ফের একবার সামনে চলে এল রত্না-শোভন-বৈশাখীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন!
বেহালার পর্ণশ্রীর বাড়ি থেকে দক্ষিণ কলকাতার বহুতল হয়ে এখন এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে শোভন চট্টোপাধ্যায়। সিবিআই এর হাতে বন্দী, অসুস্থ। জেল না বেল...তা নিয়ে আদালতে আইনি যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধের মধ্যেই ফিরে এল পুরনো যুদ্ধ। এত বিপত্তির মধ্যেও সেই ঘরোয়া-লড়াই! সেই স্বামী-স্ত্রী-বান্ধবীর পুরনো দ্বন্দ্ব! প্রাক্তন মেয়র, প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিজেপি নেতা শোভনের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর অধিকার কার? স্ত্রী-পুত্র-কন্যার, না কি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
বুধবার শোভনের আইনজীবী হাসপাতালের সুপারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন-সহ অন্যান্য অসুখ রয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গীরা এসএসকেএমে এলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। যা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে চরম উৎকণ্ঠায় ফেলতে পারে। এই অবস্থায় আমি আপনার কাছে আনুরোধ করছি, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি ছাড়া রত্না চট্টোপাধ্যায়কে যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া না হয়। বর্তমানে শোভন চট্টোপাধ্যায় চিকিৎসার জন্য যে কেবিনে রয়েছেন তার বাইরে পুলিশি পাহারা রয়েছে। এই অবস্থায়, তাঁর ছেলে সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় ও মেয়ে সুহানি চট্টোপাধ্যায় তাঁদের বাবাকে দেখলে সেটা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে অপমানজনক হবে। তাই, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি ছাড়া যেন তাঁদেরও দেখা করতে না দেওয়া হয়।’
এই চিঠি পাওয়ার পরই তা এসএসকেএমের পুলিশ পোস্টের অধিকারিককে পাঠান হাসপাতালের সুপার।
কিন্তু, রত্না চট্টোপাধ্যায়ও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হাসপাতালে বৈশাখী কী করে দেখা করে, সেটা আমি দেখছি। আমার ছেলে-মেয়ে ওদের বাবার সঙ্গে দেখা করবে। আর কেউ না।’
সোমবার শোভন গ্রেফতার হওয়ার পর সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান স্ত্রী রত্না। গভীর রাতে শোভনকে নিজাম প্যালেস থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন ছেলে সপ্তর্ষি ও বান্ধবী বৈশাখী। সারাক্ষণ শোভনের বান্ধবী ও ছেলে পাশাপাশি ছিলেন। শোভন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে গিয়ে তাঁর খোঁজ নেন রত্নাও। কিন্তু, এরইমধ্যে নতুন ট্যুইস্ট।
বৈশাখীর দাবি, সিবিআই-কে চিঠি দিয়ে শোভন জানিয়েছেন, তাঁর আইনি বিষয়ে রত্না যেন কোনও হস্তক্ষেপ না করেন। এরপরই বুধবার রাতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছে যান রত্না। দু’জনকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিজে গাড়িতে উঠে পড়েন।