কলকাতা: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ। গতকাল হাইকোর্টে ৫০ পাতার রিপোর্ট পেশ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রবীন্দ্রনাথের কবিতার অংশ উদ্ধৃত করে রিপোর্টে রাজ্য সরকারকে ছত্রে ছত্রে আক্রমণ করা হয়েছে। ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ উদ্ধৃত করে কমিশনের রিপোর্ট।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত ২ মাসে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে খুন, ধর্ষণ, ভিটেছাড়া হতে হয়েছে মানুষকে। এই ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যে। ভারতের মতো মহান দেশে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে।এই হিংসা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।’
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন। গোটা মামলার বিচারপর্ব রাজ্যের বাইরে করতে হবে।‘আদালতের পর্যবেক্ষণে সিট গঠন করে তদন্ত হোক। দ্রুত বিচারে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে বিচার শেষ করতে হবে। বিশেষ সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এই রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি। ভোট পরবর্তী অশান্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলায় জেলায় গিয়ে কমিটির সদস্যদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নথিবদ্ধ করা হয়েছে রিপোর্টে। এতে দাবি করা হয়েছেএত হিংসাত্মক ঘটনার পরও, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি রাজ্য সরকারের চরম উদাসীনতা প্রতিফলিত হয়েছে।
রিপোর্টে সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে,প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক হিংসা চালিয়েছে শাসকদল।
বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে,অশান্তি বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা আসলে শাসকদলের সঙ্ঘবদ্ধ হিংসারই প্রমাণ। যা নেমে এসেছিল সেই সব ব্যক্তিদের ওপর, যাঁরা সেই দলগুলিকে সমর্থন করার সাহস দেখিয়েছিলেন, যারা গত বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেছে।
পুলিশের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে কমিশনের রিপোর্ট অভিযোগ করা হয়েছে,এই হিংসাত্মক ঘটনা, রাজনীতিক-আমলা এবং অপরাধীদের ক্ষতিকারক আঁতাঁত প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে।
এরই সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের সিবিআই তদন্ত করানো উচিত। সিবিআই যে ঘটনার তদন্ত করবে, তার বিচার প্রক্রিয়া ভিনরাজ্যে করাতে হবে।অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হোক।আদালতের পর্যবেক্ষণে সিটের তদন্ত প্রক্রিয়া চলুক।ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
রিপোর্টের উপসংহার টানা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর - এই কবিতার লাইন দিয়ে।এরপরই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে,কবিগুরুর এই মাটিতে শেষ কয়েকমাসে খুন, ধর্ষণ, ভিটেছাড়া হতে হয়েছে হাজারখানেক মানুষকে।
মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া রিপোর্ট প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'রিপোর্ট এখনও দেখিনি। তবে বিষয়টি বিচারাধীন, তাই এনিয়ে বেশি কিছু বলব না।' যদিও তারপরই তিনি জোড়েন, 'বিকৃত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এমনকি কারা রিপোর্ট দিয়েছে, তাদের পরিচয় জানি, কিন্তু বলব না।' পাশাপাশি আক্রমণের সুর চড়িয়ে রাজ্যকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে কার্যত অভিযোগের সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'হারের পরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বদনাম করার চেষ্টা চলছে। হারের পরেও লজ্জা নেই, কিছুতেই হার মানতে পারছে না।'