কলকাতা: সমুদ্রে স্নান করছেন। হঠাৎই পায়ের নীচ থেকে সরসর করে সরে গেল বালি! ওল্ড দিঘার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু মানুষের। কিন্তু, ক’জনই বা একে পাত্তা দেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবধান! আপাত নিরীহ এই ঘটনাতেও লুকিয়ে রয়েছে বড়সড় বিপদের ইঙ্গিত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং তার ভিত্তিতে একটি জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে এমনই মারাত্মক তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলায় একটা ভীষণই প্রচলিত প্রবাদ আছে।  তা হল, সমুদ্র যা নেয়, তা ফিরিয়েও দেয়। তবে, ওল্ড দিঘার ভাগ্য বোধহয় এতটাও প্রসন্ন নয়। কারণ, সমুদ্র তার তট থেকে বালির স্তর খুবলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফিরিয়ে দিচ্ছে না।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এই সমস্যার অন্যতম কারণ ওল্ড দিঘায় সমুদ্রের ঢেউয়ের চরিত্র। ব্যাপারটা একটু সহজ করে বোঝানো যাক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওল্ড দিঘায় যে ঢেউ দেখা যায় তাকে বলে 'স্কারিং ওয়েভ' অর্থাৎ বৃত্তাকার ঢেউ।


এই ঢেউ ওপর দিক থেকে তটে আছড়ে পড়ে এভাবে সমুদ্রের দিকে ফিরে যায়।আকার গোল হওয়ায় এই ঢেউ অনেকটা বেলচার মতো পারের বালি চেঁছে নিয়ে যায়। দিঘায় বালির দানা মিহি হওয়ায় তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া আরও সহজ। এর ফলে দিন দিন নীচে নেমে যাচ্ছে বালির স্তর।
সমুদ্রতটে বালির স্তর নেমে যাওয়ায়, কমছে পার থেকে সমুদ্রতটের দূরত্বও। পরিসংখ্যান বলছে, নয়ের দশকে ওল্ড দিঘার সমুদ্রতট থেকে পারের দূরত্ব ছিল ৩০০ মিটার। এখন সেটা কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ মিটারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে জল চলে আসছে দিঘার সি-ওয়ালের একেবারে গোড়া পর্যন্ত। দুর্বল হচ্ছে তার ভিত। এখন আপনার মনে হতে পারে, সমুদ্রতটে বালির স্তর কমলে পর্যটকদের কী বিপদ? তাহলে শুনুন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, স্কাওয়ারি ওয়েভ বা বৃত্তাকার ঢেউ তটের কাছে রিপ কারেন্ট অর্থাৎ চোরাস্রোত তৈরি করে। যা থেকে বাঁচার কৌশল বহু সাঁতারুরও জানা নেই।


পাশাপাশি বালির স্তর নেমে যাওয়ায় সমুদ্রগহ্বরও নানা জায়গায় গভীর হচ্ছে। ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গিয়ে একবার সেখানে তলিয়ে গেলে ডুবে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। দিঘায় যেমন দুর্ঘটনার কথা আখছারই শোনা যায়।
এই বিপদ ঠেকানো যায় কীকরে? সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মতে, প্রথমেই ওল্ড দিঘার যে জায়গায় স্নান করা বিপজ্জনক, সেখানে সতর্কবার্তা জারি করতে হবে। আর মানুষকে শুধু সমুদ্রে নামতে নিষেধ করলেই হবে না, বিপদের কারণটাও বুঝিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু, বিপদ তো শুধু পর্যটকদের নয়। বালির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে শহরের দিকে। কিন্তু, এই ক্ষয় আটকানো যায় কী করে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুবর্ণরেখার মোহানার কাছে যে বাঁধ রয়েছে, তা নতুন করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি করতে হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, নদীর জলের সঙ্গে ভেসে আসা বালি, সুবর্ণরেখার বাঁধেই আটকে যাচ্ছে। ফলে ওল্ড দিঘার তটে বালির জোগান কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাঁধ এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তার মধ্যে দিয়ে জলের সঙ্গে বালিও ভেসে আসতে পারে।


কিন্তু, ওল্ড দিঘায় যেরকম বৃত্তাকার ঢেউ দেখা যায়, তা তো বালি খুবলে নিয়ে চলে যাচ্ছে! বিশেষজ্ঞদের মতে, এজন্য সমুদ্রের পার বরাবর ইস্পাত এবং বোল্ডারের দেওয়াল তৈরি করতে হবে। যেখানে ধাক্কা খেয়ে ঢেউ দুর্বল হয়ে পড়বে। তার আর বালি খুবলে নিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি থাকবে না।
তৃতীয়ত, সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রতটে কিছু নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে ইংরেজির ইউ আকৃতির গর্ত তৈরি করতে হবে। কারণ, গর্তে পড়লে ঢেউয়ের শক্তি অনেক কমে যাবে। এর ফলে তার শহরের দিকে এগোনোর সম্ভাবনাও কমবে। বালি খুবলে নেওয়ার ক্ষমতাও থাকবে না।