দার্জিলিং: মিথ্যা বলে বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রতারণা করে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছিল এক আত্মীয়। অনেক অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর অবশেষে দুই অচেনা ব্যক্তির সাহায্যে দেশে ফিরতে পারলেন দার্জিলিঙের ওই মহিলা। পরে তিনি জানতে পারেন, সাহায্যকারীরা পাকিস্তানি।


দেশে ফেরার পর ওই মহিলা জানিয়েছেন, ‘দিল্লিতে থাকা আমার এক আত্মীয় গত বছরের নভেম্বরে আমাকে পরিচারিকার কাজ করার জন্য দুবাইয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। দুবাইয়ে পৌঁছনোর পর আমাকে ১২ দিন রাখা হয়। তারপর বলা হয়, ওমানে গিয়ে কাজ করতে হবে। যে সংস্থা আমাকে কাজ দেয়, তারা আমার পাসপোর্ট আটকে রাখে। যাঁর কাছে কাজ করতাম, তিনি আমাকে মারতেন। ওই সংস্থার দফতরে গিয়ে আমি এ কথা জানাতে সেখানকার লোকজনও আমাকে মারধর করে অন্য একটি বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমাকে বলা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু দেওয়া হত ১২,৫০০ টাকা হত।’

ওই মহিলা আরও জানিয়েছেন, ‘আমি শুধু সামান্য হিন্দি বলতে পারি। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। আমি অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার দুই সন্তান আছে। তাদের কথা ভেবে বাড়ি ফিরে আসতে চাইছিলাম। কিন্তু ওমানের ওই সংস্থা জানায়, আমাকে আরও দু’বছর কাজ করতে হবে। আমার কাছে পাসপোর্টও না থাকায় ফিরে আসতে পারছিলাম না। আমার দিদির ছেলে দুবাইয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আমি ওকে ফোন করে সব কথা জানাই। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকে ওকে যখনই ফোন করতাম, তখনই দেখতাম ফোন বন্ধ। আমার দু’টি মোবাইল ফোন ভেঙে দেন ওমানের ওই সংস্থার কর্মীরা। তবে আমি অন্য একটি ফোন কিনে কালিম্পঙের সমাজকর্মী উদেন ভুটিয়ার সঙ্গে কথা বলি। তাঁকে গোটা ঘটনা জানাই। এরই মধ্যে ওমানের ওই সংস্থা আমাকে সালাহ নামে একটি জায়গায় কাজ করতে যেতে বলে। আমাকে একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়। সেই বাসের চালকের হাতে আমার পাসপোর্ট তুলে দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে বলা হয়। সেই বাসে উঠে আমি উদেনকে ফোন করে কাঁদছিলাম দেখে দুই পাকিস্তানি এগিয়ে আসেন। তাঁরা বাসচালক হিসেবে যাচ্ছিলেন। তাঁরা আমার কাছ থেকে সব কথা শুনে সাহায্য করেন। তাঁরাই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমাকে একটি থানায় পৌঁছে দেন। আমি পাসপোর্ট ফিরে পাই।’

এদিকে উদেনও ওই মহিলাকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। তিনি দার্জিলিঙের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও সাংসদকে খবর দেওয়া হয়। অবশেষে এ মাসের ১১ তারিখ ওই মহিলাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তিনি দার্জিলিঙে ফিরে এসেছেন।