পূর্ণেন্দু সিংহ ও করুণাময় সিংহ, বাঁকুড়া ও মালদা: নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের আগে উত্তপ্ত বাঁকুড়ার খাতড়া। তৃণমূল নেতাদের কাটআউট ছিঁড়ে নোংরা করার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই এই ঘটনা।


উপলক্ষ্য নেতাজির জন্মবার্ষিকী পালন। কিন্তু ভোটের বাংলায় এই দিনেও বাদ গেল না রাজনীতি! নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে আজ বাঁকুড়ার খাতড়ায় অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা সহ একাধিক তৃণমূল নেতার। কিন্তু সভার কয়েক ঘণ্টা আগে ছেঁড়া হল তৃণমূল নেতাদের একের পর এক কাটআউট। কোনও কাটআউট ছিঁড়ে তা নোংরাও করা হল।

কাটআউট বিকৃতির নেপথ্যে বিজেপির হাত দেখছে তৃণমূল। খাতড়ার তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক সভাপতি মোহন করের অভিযোগ, ‘রাস্তার দু’পাশে কাটআউট ছিঁড়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা, জেলা ও রাজ্যে নেতৃত্বের পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয়।’

অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির পাল্টা দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। বাঁকুড়ার বিজেপি সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকারের পাল্টা দাবি, ‘এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে।’

খাতড়া থানায় গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছে তৃণমূল।

অন্যদিকে, নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল মালদার মালতিপুরে। ধাক্কাধাক্কিতে জড়ালেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি ও কোঅর্ডিনেটরের অনুগামীরা। নেতাজির জন্মদিনে কোন্দল ঘিরে তৃণমূলকে বিঁধেছে বিজেপি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় যখন সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন নেতাজি জন্মজয়ন্তী ঘিরেও তৃণমূলের কোন্দল বাদ গেল না! উল্টে তা চলে এল একেবারে প্রকাশ্যে। বচসা থেকে ধাক্কাধাক্কিতে জড়াল শাসকদলেরই দুই গোষ্ঠী।

মালদার মালতিপুরে এদিন তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি রহিম বক্সীর অনুগামীদের উদ্যোগে নেতাজি জয়ন্তী পালনের আয়োজন হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর মুখেই মালতিপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি হবিবুর রহমানের অনুগামীরা বিক্ষোভ দেখান। তখনই তৃণমূলের পতাকা হাতে শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ব্লকের নেতাদের অন্ধকারে রেখে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মালতিপুরের তৃণমূল নেতা মুজিবর রহমানের দাবি, ‘ব্লক সভাপতিকে না জানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, অনেক কর্মী অনুষ্ঠানের কথা জানেন না, এই কারণে উত্তেজনা, বিক্ষোভ, মালতীপুরের রেজাল্ট খারাপ হলে দায়ী থাকবেন জেলার নেতারা।’

যখন গন্ডগোল চলছে তখন মঞ্চে উপস্থিত জেলা তৃণমূল নেতা তথা রাজ্য সহ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এখানে দু’টি গোষ্ঠী আছে। কিছু সমস্যা হয়েছে। এতদিন আলোচনা হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করব।’

নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনে তৃণমূলের কোন্দল ঘিরে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। মালদার বিজেপি সহ-সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ওদের মধ্যে কোন্দল থাকতেই পারে। নেতাজির জন্মদিন যা হল, তা আসলে নেতাজিকে ছোট করা হল। বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে তৃণমূল।’

২০১৬-র বিধানসভা ভোটে মালতিপুর কেন্দ্রে ২ হাজার ৬০০ ভোটে জয়ী হয় কংগ্রেস। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে মালদা উত্তর লোকসভার অন্তর্গত এই কেন্দ্রে কংগ্রেস এগিয়ে ৫ হাজার ৬৪৪ ভোটে। দিন কয়েক আগে মালদার জন্য আলাদা কমিটি গড়ে দেয় তৃণমূল। এই প্রেক্ষিতে ভোটের মুখে মালতিপুরের ঘটনায় অস্বস্তি আরও বাড়ল শাসকদলের।