ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: বৃহস্পতিবার ছিল করোনা টিকাকরণের নবম দিন। মোটের উপর সুষ্ঠুভাবে কাটলেও সামগ্রিকভাবে টিকাকরণের হার ৮০% থেকে কমে ৭০%-এ দাঁড়াল। একধাক্কায় ১০% কমেছে টিকা নিতে আসা নথিভুক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা। বিশদ কারণ খুঁজছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। যদিও সরকারিভাবে পরিসংখ্যান সন্তোষজনক বলেই দাবি স্বাস্থ্য ভবনের। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের মতে এদিন টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যাও কম বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। মোট আটজন মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ করলেও, মাত্র একজনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। ওই স্বাস্থ্য কর্মীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে করোনা টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ ব্যক্তিদের মেডিক্যাল রেকর্ড খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্বাস্থ্য অধিকর্তার সহ পাঁচ বিশেষজ্ঞের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির নাম - Adverse Event Following Immunisation (AEFI) কমিটি। বুধবার কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। শনিবার ফের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। কমিটি খতিয়ে দেখছে তিনটি বিষয়। যাদের টিকা নেওয়ার পর অসুস্থতার হয়েছে। মূলত কি উপসর্গ বা সমস্যা। কোন কোন বয়সের মানুষের ওরকম হচ্ছে। কি কারণে হচ্ছে। তবে বৈঠক সদস্যরা প্রাথমিকভাবে একমত হন যে কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে এ রাজ্যে বুধবার অবধি কারও তেমন বাড়াবাড়ি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। তবে পর্যালোচনায় উঠে আসে অধিকাংশ টিকা নিতে গিয়ে ভয়ে বা উদ্বেগে অসুস্থ হচ্ছেন। তাই, এই বিষয়ে আরও প্রচার ও সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে,নবম দিনে নথিভুক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল ৪২,০০০। যদিও টিকা নিতে হাজির হন ১৯১৭৭ জন। কেন এত কম? স্বাস্থ্যকর্তারা ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলা টিকাকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের উপস্থিতির হার বাড়ানোর জন্য উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত ১৬ জানুয়ারি শনিবার গোটা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয় করোনার ভ্যাকসিনেশন। প্রায় এক বছর উদ্বেগে কাটানোর পর, অনেকের মুখে হাসি ফুটলেও এড়ানো যায়নি উদ্বেগ। প্রথমদিনেই করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বি সি রায় হাসপাতালের একজন নার্স। ৩৬ বছরের ওই নার্সকে দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিসিইউ-তে তাঁর চিকিৎসা চলছে। দিন পাঁচেক পর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার কারণে ওই সমস্যা বলে মত ছিল চিকিৎসকদের।
১৬ জানুয়ারি থেকে বিশ্বের বৃহত্তম করোনা টিকাকরণ শুরু হয়েছে ভারতে। প্রথম দফায় ৩ কোটি করোনা যোদ্ধাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ৩ কোটি ভ্যাকসিনের পুরো খরচ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। টিকাকরণের পর দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল ভ্যাকসিনেশন কার্ড। ইতিমধ্যেই দুটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন। ভারতে কোভিশিল্ডের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা সিরাম ইন্সসিটিউট অফ ইন্ডিয়া দাবি, কোভিশিল্ডের ১ কোটি ১০ লক্ষ ডোজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাত পেয়ে গেছে তারা। সংস্থার দাবি, এর প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ২০০ টাকা করে। তবে, এটা সরকারের জন্য নির্ধারিত বিশেষ দাম। খোলা বাজার একটি ডোজের দাম এক হাজারের কাছাকাছি হবে। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবেন, তা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্র। যাঁরা দেশবাসীর স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের প্রথমে টিকা দেওয়া হবে, সাফাই কর্মী, সৈনিক, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স - তাঁদের প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এবং ৫০ বছরের কম বয়সী অথচ সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল, দ্বিতীয় পর্যায়ে তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। এরপরেই বিশেষ বিমানে রাজ্যে আসে করোনার ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন কলকাতায় পৌঁছনোর পর তা প্রথমে বাগবাজারের স্বাস্থ্য দফতরের ভ্যাকসিন স্টোরে মজুত রাখা হবে। এরপর বিভিন্ন জেলায় তা বণ্টনের করা হয়। কোভ্যাক্সিনের প্রথম দফায় ১ লাখ ৬০ হাজার ডোজ রাজ্যের হাতে এসে পৌঁছনোর পর কোথায় পাঠানো হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেই স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে।