পশ্চিম মেদিনীপুর: বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ এখন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আছড়ে পড়বে ইয়াস। মোকাবিলায় পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি তুঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত হানতে পারে। এমনটা ধরে নিয়েই উদ্ধার ও ত্রাণ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা নদীর তীরে বসবাসকারীদের কাল থেকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হবে। 


ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা। রক্তচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে আবহাওয়া দফতরের ঘোষণা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম। ২৬ তারিখ সকালে ওড়িশা-বাংলা উপকূলে পৌঁছে যাবে। পারাদ্বীপ সাগর এলাকা দিয়ে অতিক্রম করবে।


গতবারের আমফান-অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মাঠে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনে ওড়িশা সীমানা এলাকায় নাগাড়ে মাইকে প্রচার করছে পুলিশ।  দাঁতনের হাসিমপুর গ্রামে সুবর্ণরেখা নদীর পাড় বরাবর, দিনভর শোনা গেল এই সতর্কবার্তা। সুবর্ণরেখার ওপারে ওড়িশা। এপারে দাঁতনের হাসিমপুর। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামবাসীদের।  


গ্রামবাসীরা বলছেন, মাইকিং তো হচ্ছে শুনছি। আমরা বর্ডারে থাকি। ছেলেপিলে নিয়ে সংসার। নদীর পাড়ে বাড়ি, আতঙ্কে আছি। বেশি কিছু হলে ফ্লাড সেন্টারে চলে যাব। এক বিপর্যয়ের মধ্যে, ধেয়ে আসছে আরেক বিপর্যয়! আবারও বহু মানুষের নিরাশ্রয় হওয়ার আশঙ্কা। মেদিনীপুরে জেলাশাসকের অফিস থেকে বিভিন্ন জায়গায় ত্রিপল পাঠানো হচ্ছে। 


বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক, দেবব্রত সাউ বলছেন ১২ হাজার ত্রিপল বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই করছি। ডিস্ট্রিবিউট হবে। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম তৈরি। আমরা সজাগ রয়েছি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কর্তারা রবিবার দুপুরে সমস্ত ব্লকের আধিকারিকের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। 


প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় ১৩টি বন্যাত্রাণ কেন্দ্র তৈরি রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ স্কুলে গড়ে উঠেছে উদ্ধার কেন্দ্র। শনিবার থেকে বিভিন্ন ব্লকে শুকনো খাবার ও ত্রিপল পাঠানো শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে সব সেন্টারে। 


দাঁতন যুগ্ম ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক, তারক অধিকারী জানিয়েছেন, ৯০টি রেসকিউ  সেন্টার খোলা হয়েছে। বেশ কিছু স্কুলঘর স্যানিটাইজ করা হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ঝড় মোকাবিলা করার সমস্ত রকম ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। গাছ কাটার সরঞ্জাম থেকে সব তৈরি।


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর, দাঁতন, নারায়ণগড়, সবং, ডেবরা, ঘাটাল ও দাসপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এর আগে বুলবুল আর আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই জায়গাগুলিতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবার।