সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের আগুন এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। কোথাও কোথাও পাতার ফাঁকে ধিকি ধিকি দেখা যাচ্ছে আগুনের রেখা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।


বসন্তে আগুনরঙা পলাশে লাল হয়ে ওঠে পাহাড়গুলো...রুক্ষ শীত শেষে, কচি পাতায় ভরে ওঠে সবুজ-বনানী। কিন্তু, এই বসন্তে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ল পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়। আগুনের গ্রাসে ছারখার জঙ্গল। লেলিহান শিখার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করছে সবুজ। এতদিন যে জায়গা ছিল অক্সিজেনের ভাণ্ডার, সেখানে এখন পোড়া কাঠ আর কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়া। জঙ্গল ছেড়ে পালিয়েছে বন্যপশুরা।


গত কয়েকদিন ধরে অযোধ্যা পাহাড়ের ২৫টি জায়গায় আগুন ধরে যায়। বর্তমানে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেই আগুন। যদিও কোথাও কোথাও শুকনো পাতার খাঁজে এখনও দেখা যাচ্ছে আগুনের শিখা। এবছরই প্রথম নয়, বসন্তে শুকনো পাতা ঝরা জঙ্গলে আগেও আগুন লেগেছে। বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের নজরদারির দিকে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। 


অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দা অখিল সিংহ সর্দার বলেছেন, ‘কিছু ধান্দাবাজ লোক পাহাড়কে ভালবাসে না। আর এখানে কীভাবে জঙ্গল রক্ষা করা যাবে তার কোনও ভাল ব্যবস্থাও নেই। যদিও আমরা বন সুরক্ষা কমিটিগুলির সঙ্গে মিটিং করেছি, কিন্তু সরকারকে তাদের ঠিকমতো সহযোগিতা করতে হবে। আজকে জঙ্গলে আগুন লেগেছে। কেউ কাঠ নিয়ে যাচ্ছে কেন? তাদের আটকাতে হবে। প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই এসব হচ্ছে।’


অযোধ্যা পাহাড়ের অপর এক বাসিন্দা দীনু সিংহ সর্দার বলেছেন, ‘এখন পর্যটনের জন্য প্রচুর রাস্তাঘাট হয়েছে। মানুষ আরাম করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনে দোল আসছে। যদি এমনভাবেই আগুন লাগে, তাহলে ক্ষতি হবে। আমরা কিছুদিন আগে বলছিলাম, ফাগুনে আগুন লেগেছে পাহাড়ে। আর এইভাবে গাছপালা যদি নষ্ট হয়, তাহলে কেন আসবে মানুষ? তাই আমরা চাই, জঙ্গল বাঁচানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’


বন দফতরের তরফে অবশ্য দাবি, প্রতিবারই জঙ্গলে আগুন লাগার প্রবণতা থাকায় তাঁরা অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট বেস সিস্টেমের মাধ্যমে জঙ্গলের নজর রাখেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আটকানো গেল না দাবানল। 


পুরুলিয়া ডিভিশনের ডিএফও রামপ্রসাদ বাদানা বলেছেন, ‘অনেকদিন বৃষ্টি হয়নি। আমরা একটা স্যাটেলাইট বেস সিষ্টেম চালু করেছিলাম। যদি বড় আগুন লাগে তাহলে জিপিস পয়েন্ট সহ আমাকে একটা মেসেজ দেয়। তারপর আমরা টিমগুলো রেডি করলাম। যে পয়েন্টগুলো আছে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলাম। চারদিন ধরে আমাদের পুর টিমটাই ক্যাম্প করে আছে আর যারা জঙ্গলে যাচ্ছে তাদের চেকিং করা হচ্ছে যাতে লাইটার সিগারেট এই সব না নিয়ে যায়।’


জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী এলাকা মানুষকে সাবধান করতে মাইকে প্রচার চলাচ্ছে প্রশাসন।


বসন্তে পলাশের প্রেমে অনেকেই রওনা হন পুরুলিয়ার উদ্দেশে। এবার দোলের আগে এই ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন পর্যটকরা।