পুরুলিয়া ও কলকাতা: পুরুলিয়া সূচকাণ্ডে নৃশংসতার মাত্রা দেখে অনেকেরই শিড়দাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছে! সবার মনেই প্রশ্ন, একটা ফুটফুটে শিশুর সঙ্গে এতটা নৃশংসতা কীভাবে সম্ভব?
এই পরিস্থিতিতে জেরায় চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিল সনাতন ঠাকুর। পুলিশ সূত্রে দাবি, সে বলেছে, বহুদিন ধরেই আমি আমার তন্ত্রসাধনার জন্য একটা গিনিপিগ খুঁজছিলাম!
কিন্তু আসলে কী উদ্দেশ্য ছিল সনাতনের? জেরায় তার দাবি, স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে সে জানতে পারে, তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভের উপায় হচ্ছে শিশুর শরীরে সূচ ফোটানো! সেই মতো ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলে, বাচ্চাটার শরীরে সূচ ঢোকাতে শুরু করি। আমি ৩-৪টি সূচ ঢুকিয়েছি। মঙ্গলা (শিশুর মা) সবই জানত।
তবে শুধু তন্ত্রসাধণায় সিদ্ধিলাভ করাই নয়, আরও একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য শিশুটিকে ব্যবহার করেছিল সনাতন! পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় সে জানিয়েছে, আমি স্বপ্নে শিশুটির মা-কে বিয়ে করার আদেশ পেয়েছিলাম। কিন্তু, সেই আদেশ পালন করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল শিশুটি। ওর জন্যই তো আমাদের বিয়ে হচ্ছিল না! তাই ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করি।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, শিশুকে ব্যবহার করে জোড়া উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেছিল কীর্তনিয়া সনাতন। প্রথমত, মঙ্গলাকে পাওয়া এবং দ্বিতীয়ত তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করা। শিশুর শরীরে সূচ ফোটানোর ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই গা ঢাকা দেয় মূল অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুর। এর মধ্যেই এসএসকেএমে মৃত্যু হয় শিশুটির! এরপর উত্তরপ্রদেশের গোপন আস্তানা থেকে সনাতনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে বাঁচতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল সে!
গত সপ্তাহে সে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে বলে, আমার ব্যাটার বউ ঢুকিয়েছে। হিংসা, ঝঞ্ঝাট, ঝামেলার জন্য সে এই কাজ করেছে।
কিন্তু নিজের কুকীর্তি ঢাকার এই চেষ্টা সফল হয়নি সনাতনের! টানা জেরায় সে দিয়েছে শিউরে ওঠার মতো একের পর এক তথ্য! পুলিশ সূত্রে খবর, সনাতন কবুল করেছে, শরীরে সূচ ঢোকানোর সময় শিশুটি যখন যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠত, কাঁদত, বলত আমাকে ছেড়ে দাও--- তখন পৈশাচিক উল্লাসে লাফিয়ে উঠত সনাতন!
কারণ, তার কাছে, শিশুর ওই আর্ত চিৎকারই ছিল সিদ্ধিলাভের শক্তি...। পুলিশ সূত্রে দাবি, মৃত শিশুর মায়ের সঙ্গে সনাতনকে বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। প্রয়োজনে ফের দু’জনকে মুখোমুখি বসানো হবে।