রাণা দাস, কাটোয়া : এ যেন ঠিক শোলে সিনেমার গল্প। চলচ্চিত্রে বাসন্তী তথা হেমা মালিনীকে বিয়ে করার জন্য জল ট্যাঙ্কের উপরে উঠে গিয়েছিলেন বীরু তথা ধর্মেন্দ্র। বাসন্তী তাকে বিয়ে না করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন, সেই হুমকি দিয়েছিলেন জল ট্যাঙ্কের ওপর থেকে। আর নিচ থেকে গ্রামবাসীরা তাকে নামার অনুরোধ করছেন, শোলে সিনেমার এই বিখ্যাত দৃশ্যই এবার দেখা গেল নাদন ঘাটে। তবে রিলের গল্পে রিয়েল ট্যুইস্টও আছে। এখানে মোবাইল টাওয়ার থেকে জনৈক যুবক নামতেই 'অনেক সিনেমা দেখেছিস, এবার বাড়ি চল' বলে উত্তম-মধ্যম দিলেন তাঁর মা।
নাদন ঘাটে ২৫ বছরের খোকন দাস প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য মোবাইলের টাওয়ার এর ডগায় উঠে যান। আর সেই খবর চাউর হতেই ভিড় জমতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। তারই পাড়ার এক মহিলার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন পেশায় ড্রাইভার খোকন। তাঁর এক বন্ধু জানান, খোকন তার প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই খোকন যেন কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিল। বন্ধুবান্ধবের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিল। ক'দিন ধরে সে বন্ধুদের বলছিল তাঁর প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য তাকে কিছু একটা করতে হবে।
খোকন যে শোলে সিনেমার বীরুর পথ ধরবেন, তা বন্ধুরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। বন্ধুদের অনুরোধ তো দূরের কথা, পুলিশ বারবার প্রেমিক খোকন দাসকে টাওয়ার থেকে নামতে বললেও কে কার কথা শোনে। পুলিশের কাছে বরং অনুরোধ করতে থাকে, প্রেমিকাকে তার সাথে বিয়ে করাতে পুলিশ রাজি করালে তবেই সে নামবে। পুলিশ তাকে যতই নামতে বলে সে টাওয়ারের ততই উঁচুতে উঠতে শুরু করে। হাতে মদের বোতল নিয়ে তার একটাই ডায়লগ, তার প্রেমিকাকে না পেলে সে টাওয়ার থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করবে। খোকন মোবাইল টাওয়ারের একেবারে ডগায় উঠে যাওয়ায় পুলিশের কোনও কথাই আর তার কানে সম্ভবত যাচ্ছিল না।
অবস্থা বেগতিক বুঝে সেখানে থাকা পুলিশ অফিসার ফোন করেন নাদন ঘাট থানার ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়কে, সেখান থেকে ফোন যায় বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেনের কাছে। তিনিই নির্দেশ দেন জাল দিয়ে টাওয়ারের চারিদিক ঘিরে ফেলতে, আর হ্যান্ড মাইক দিয়ে তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে। পুলিশ প্রেমিক খোকন দাসের মাকে ডেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে ছেলেকে নামার অনুরোধ করায়। তবে তাতেও কোন লাভ হয়নি। শেষমেশ খোকনের কয়েকজন বন্ধু টাওয়ারে উঠে প্রেমিক খোকন দাস কে নামায়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে নাদনঘাট থানার পুলিশ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার জানিয়েছে টাওয়ারের একেবারে ডগায় উঠে গেছিল খোকন দাস। মত্ত অবস্থায় ছিল, পড়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। পুলিশ অনেক চেষ্টা করে তাকে বাঁচিয়েছে।
শোলে বইয়ের গল্পের মতো বীরু আর বাসন্তীর মিল হলেও খোকন টাওয়ার থেকে নামার পরই তার মা তাকে মারতে মারতে বাড়ি নিয়ে যাযন। তার মাকে বলতে শোনা যায় অনেক সিনেমা দেখেছিস এবার বাড়ি চল। এই ভাবেই শেষ হয় রিয়েল সিনেমার গল্প। সিনেমার শেষে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, রিয়েলে বীরু খোকন কি রিলের মতোই জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে বাসন্তীকে!