কলকাতা: ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে ধৃত সনাতন রায়চৌধুরীর চাঞ্চল্যকর দাবি। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সনাতন দাবি করেছেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি হয়ে ব্রিকস সম্মেলনে গিয়েছিলেন। যে সম্মেলনে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।  তা ছাড়াও সনাতন বিদেশের একাধিক দেশে গিয়েছেন বলে জেরায় দাবি করেছেন।  সেইসঙ্গে সনাতনের আরও দাবি, ২০১৩ সালে তিনি ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে টোকিওয় ইন্দো জাপান বিজনেস সামিটে অংশ নিয়েছিলেন।  


সনাতনের দাবি সত্যি হলে, কীভাবে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি হয়ে ব্রিকস সম্মেলনে গেলেন? কীভাবেই বা অংশ নিলেন টোকিও ইন্দো জাপান বিজনেস সামিটে? কার কার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল, কাদের সাহায্যে তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন? এ সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রকের কাছ থেকে পুলিশ খোঁজ নেবে, সত্যিই সনাতন ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন কিনা। যদি যোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে কীভাবে দিয়েছিলেন? সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে না কি, অন্য কোনও ভাবে?  অভিযোগ, নিজেকে হাইকোর্টের রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য, সিবিআইয়ের কৌঁসুলি, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন সময় পরিচয় দিয়েছেন সনাতন। 


নীল বাতি লাগানো গাড়ি, তাতে CBI-এর স্টিকার। প্রভাব খাটিয়ে গড়িয়াহাটে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার বরানগরের সনাতন রায়চৌধুরী। ধৃতের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়ো পরিচয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।


সনাতন রায়চৌধুরীর ফেসবুক প্রোফাইলে, পরিচয় হিসেবে স্পেশাল কাউন্সিল অফ গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া লেখা রয়েছে। এছাড়াও, ফেসবুকে তাঁর একাধিক পরিচয় দেওয়া রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফিকির স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ মেম্বার, বার কাউন্সিল এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ জাস্টিসস-এর সদস্য। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল’ল নিয়েও তিনি PHD করেছেন বলে ফেসবুকে উল্লেখ রয়েছে। আইনের পাশাপাশি, IIM থেকে সনাতন MBA করেছেন বলেও দাবি। নিজের প্রভাব বোঝাতে ফেসবুকে, বেশকিছু ছবি দিয়েছেন সনাতন। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি, ভুয়ো IAS অফিসার দেবাঞ্জনের খবরের শিরোনাম উদ্ধৃত করে প্রতারকদের থেকে সচেতন থাকার পরামর্শও দিয়েছেন সনাতন। ফেসবুকে দেওয়া তথ্যগুলির অধিকাংশই সত্যি নয় বলেই মনে করছে পুলিশ!


পুলিশ সূত্রে দাবি, ২৫ জুন তালতলা থানায় ফোন করেন সনাতন রায়চৌধুরী। থানার এক গতকাল আধিকারিকে বলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের উপদেষ্টা। অভিযোগ, এই পরিচয় দিয়ে একটি মামলায় পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু, পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপরই তালতলা থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ।