কলকাতা: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিশানা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, আমরা অমর্ত্যবাবুর থেকে কিছু আশা করি না। আমরা ওনাকে সম্মান করি। উনি যেন একটি গোষ্ঠীর মুখপাত্র না হন। কোনও পার্টির হয়ে কথা বলা উচিত নয়। তাহলে তো আমরা ভাবব,ভুল লোককে পুরস্কার দেওয়া হল? মন্তব্য দিলীপ ঘোষের।  বিজেপি নেতা বলেছেন,  মানুষ তো ওঁর কাছ থেকে বুদ্ধি নেবে। উনি যদি এক অসফল মুখ্যমন্ত্রীর কথায় চলেন, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ তখন ভাববে। উনি তো কম্যুনিস্ট ভাবধারার মানুষ। তাঁরাই সবক্ষেত্রে রাজনীতি শুরু করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি শুরু করেছে।উনি আশপাশের লোকেদের থেকে সাবধান হোন। অমর্ত্যবাবুর আশীর্বাদধন্য সরকার রাজ্যে হিংসা চালাচ্ছে।



বিজেপির এ ধরনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, অমর্ত্য সেন জানেন ওনার কী করা উচিত। এই ধরনের মন্তব্য বন্ধ হওয়া দরকার। বিজেপির উচিত দলীয় কর্মীদের সতর্ক করা।
সম্প্রতি একটি মহল থেকে দাবি করা হয়, অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমির কিছুটা অংশ বিশ্বভারতীর এক্তিয়ারভুক্ত।
এনিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই বৃহস্পতিবার সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'আপনারা কি বিশ্বাস করেন, অমর্ত্য সেনের এমন কোনও দিনও আসবে, যে তাঁকে শান্তিনিকেতনে জমি দখল করতে হবে! অমর্ত্য সেন আদর্শগত ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে বলে তাঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে, এটা বাংলার মানুষ সহ্য করবে না। আমি বাংলার হয়ে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা করবেন অমর্ত্যদা, আপনাদের মতো মানুষকেও এরা সম্মান দিতে জানেন না। আমি দুঃখিত।'

এর আগে শুক্রবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন,'কিছু অনুপ্রবেশকারী আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আমি এতে ব্যথিত। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি আপনার পাশে আছি। অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আপনি আমাকে নিজের বোন এবং বন্ধু হিসেবে ধরবেন।'
বিশ্বভারতীতে এই জমি বিতর্কে ব্যথিত অর্মত্য সেন। ABP Ananda কে দেওয়া এর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন এ কথা । বিষ্ময়প্রকাশ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ ৮০ বছর আগের বাড়ি। তাঁর বাবা বাজার থেকে জমি কেনেন। সেই জমিরএকাংশ বিশ্বভারতীর বলে সম্প্রতি দাবি করে শাসকশিবির-ঘনিষ্ঠ একটি মহল। 'কিন্তু এতদিন পরে কেন হঠাৎ এই বিতর্ক?’ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
‘বাজার থেকে কেনা জমি, ৫০ বছর পর হঠাৎ কেন বিতর্ক?’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠি দিয়ে সহমর্মিতার কথা লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবিপি আনন্দকে জানালেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি আরও বলেন, ‘এই আজগুবি ভাবনা রাজনৈতিক কারণকেই উস্কানি দিচ্ছে। এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ আছে, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পড়ে মনে হল।’
তিনি আরও জানান, বিশ্বভারতীর একটি অংশ জমি জবরদখল করে রেখে বাড়ি তৈরির অভিযোগ আনলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও লিখিত আকারে কোনও অভিযোগ তিনি পাননি বলেই জানান অমর্ত্য সেন। নোবেলজয়ী বলেন, ‘আমাদের কোনও চিঠি দেয়নি বিশ্বভারতী। কিছু জানাননি উপাচার্য। যাঁর বাড়ি তাঁকে কিছু না জানিয়ে অন্যত্র বলা হচ্ছে, ৫০ বছর পরে হঠাৎ বিশ্বভারতীর উপাচার্যের চেঁচামেচি। এর মধ্যে একটা ছোটলোকামি আছে।’

তিনি মনে করেন, ‘ উপাচার্য এই ব্যাপারে নিজে কথা বলছেন না। তিনি বলছেন, তাঁর অফিসে অনেক বড় বড় লোক আছে। তাঁর অফিসেরই কেউ কেউ এ ধরনের কথা বলছে।' নোবেলজয়ী এও মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতিতে মদত দিচ্ছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, ‘এই ছোটোলোকামি ঢাকা যাচ্ছে না’।