কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সন্দীপ সরকার ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা: আজ বাংলার ঘরে ঘরে বাগদেবীর আরাধনা৷ নিউ নর্মালে স্কুল, কলেজে বাণী বন্দনার আয়োজনে কড়াকড়ি থাকলেও, পুজোর আনন্দে সামিল ছাত্রছাত্রীরা। মাস্ক আর স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়েই পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ বিতরণ আর খুদেদের হাতেখড়িতে জমজমাট বাণীবন্দনা।


বাংলার ঘরে ঘরে বাগদেবীর আরাধনা। আজ সকাল থেকেই শাঁখ, উলুধ্বনি আর কাঁসর-ঘণ্টার শব্দে মুখর চারদিক৷ নিউ নর্মালে স্কুল, কলেজে বাণী বন্দনার কড়াকড়ি থাকলেও, পুজোর আনন্দে খামতি ছিল না। মাস্ক, স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়েই পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ বিতরণ হল।


দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মানসকন্যা৷ তাঁর এক হাতে বীণা, অন্য হাতে বই৷ সামান্য ফুল-মিষ্টি-বেলপাতা-যব শিস আর দোয়াত-কলমেই তুষ্ট তিনি৷ মন্ত্রতন্ত্র, নিয়ম-কানুন তেমন কিছু নয়৷ কিন্তু বড়দের পড়াশোনার ছুটি হলেও, এদিনই খুদে পড়ুয়াদের হয় হাতেখড়ি।


সরস্বতী পুজো আবার বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে-ও বটে। বাসন্তী রঙা শাড়ি আর পাঞ্জাবির বাঙালিয়ানায় ফেরার দিন৷ সবমিলিয়ে আরাধনা আর ভুরিভোজে জমজমাট সরস্বতী বন্দনা৷ 


কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের আঁচ পাওয়া গেল সরস্বতী পুজোয়। কেউ কলেজ ক্যাম্পাসে গাইলেন ভোটের গান। কেউ আবার পুজো মণ্ডপে বসে মাতলেন তর্ক-যুদ্ধে। 


বাগদেবীর আরাধনায় বাগযুদ্ধে শান। রাজনৈতিক নেতাদের তরজায় তপ্ত হয়ে উঠল বসন্ত দিনের সরস্বতী পুজোও। মঙ্গলবার সকালে, আশুতোষ কলেজে যান এই কলেজেরই প্রাক্তনী, তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। হলুদ পাঞ্জাবি, মেরুন ধুতি, মনে বসন্ত। একদিকে, লাজুক হাসি, অন্যদিকে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। তৃণমূল নেতা ও তাঁর অনুগামীদের স্লোগানে সরগরম হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস।


বিদ্যার দেবীর আরাধনা, পুষ্পাঞ্জলী। তারই মাঝে মদন মিত্রের গলায় ভোটের গান। এরই মাঝে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজনৈতিক হুঁশিয়ারিও দিলেন বিজেপি নেতাদের। মদন মিত্র বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। বিজেপি ব্যারাকপুর দেখালে, আমরা মীরজাপুর দেখাব। আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে,তবে শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি।’


টিএমসিপি-র সরস্বতী পুজোয় যোগ দেওয়ার পর, আশুতোষ কলেজের ছাত্র পরিষদের পুজোতেও যান মদন মিত্র। তিনি বলেন, ‘যখন দেশে বর্গী আসে, কৈলাস বিজয়বর্গী, তখন কে কোন দল দেখলে চলবে না। সবাকে কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়তে হবে। আমি, মমতা, পার্থ সবাই একসময় ছাত্র পরিষদ করতাম।’


এদিন হাওড়ার বাউড়িয়ায় বিজেপির মহিলা সেলের আয়োজন করা একটি পুজোয় যান বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি অঞ্জলি দেন। সরস্বতী পুজোয় দিলীপের মুখে দুর্গা ও রাম-নাম। তিনি বলেন, ‘রামের বিরুদ্ধে দুর্গাকে আনা হচ্ছে। রামের বিরুদ্ধে কেন দুর্গা? ভোটের জন্য সবাইকে রাস্তায় নামাচ্ছেন।’


পাল্টা কটাক্ষ করে বিদ্যুত্‍মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাম আমলেও দিলীপকে রাজনীতিতে দেখা যায়নি।’


এদিন বিজয়গড়ে তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটরদের নিয়ে সরস্বতী পুজোয় মাতেন ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানেও বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সারাবছর পুজো করি। বিজেপির মতো ভোটের জন্য করতে হয় না।’


রাজনীতির আঙিনায় নিরন্তর ভাষার অপপ্রয়োগ। সরস্বতী পুজোয় সেই ভাষা নিয়ে সংযমের কথা বললেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি নরেন্দ্রপুরে নিজের বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেন। সেখানেই তিনি বলেন, ‘বাক-স্বাধীনতা সবার আছে। কিন্তু, তা যেন অপমানের বস্তু না হয়ে দাঁড়ায়।’


বাক সংযমের কথা শোনা গেল পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গলাতেও। একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় সামিল হন পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সমাজটা যেন সুস্থ হয়। বাক সংযম থেকে যেন বুদ্ধির প্রসার ঘটে।’


সরস্বতী পুজোয় ‘মা কিচেনে’ দেখা গেল মালা রায়কে। নিজে হাতেই খাবার পরিবেশন করলেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ। তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘গ্যাসের দাম এত বেশি.. ৮০০ টাকা। বিনা পয়সার চালটা তো ফুটিয়ে খেতে হবে। তার টাকা নেই।’


নিজের এলাকায় সরস্বতী পুজোয় সামিল দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘আমরা ছোট থেকে পুজো করি। বিজেপির থেকে সার্টিফিকেট নেব না। যে যার ধর্ম পালন করবে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার।’


দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা ভোট। দিন-রাত মিটিং-মিছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচি। দলের কাজে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। তারই মাঝে, বাদ নেই বাণী বন্দনা। বাদ নেই কথার উত্তাপ।