সরিষা (দক্ষিণ ২৪ পরগনা): খুনে অভিযুক্ত এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার সেকেন্ড ইন কম্যান্ডকে থানা থেকে ছিনতাই। বাধা দিতে গেলে পুলিশকে নিগ্রহ। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আত্মসমর্পণ। শুক্রবার সকালে এই ঘটনা ঘটল ডায়মন্ডহারবারে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সরিষা হাটে একটি খুনের ঘটনায় এসএসবির কম্যান্ডিং অফিসার দীপককুমার সিংহ সহ তিনজনকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে ডায়মন্ডহারবার থানার পুলিশ। শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ দু’টি গাড়িতে চড়ে থানায় হাজির হন এসএসবি জওয়ানরা।ভিতরে ঢুকে তাঁরা পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। পুলিশ সূত্রে দাবি, তখনই কাউকে কিছু না জানিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে সটান এসএসবি-র গাড়িতে উঠে পড়েন খুনের ঘটনায় ধৃত এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার দীপককুমার সিংহ।
সঙ্গে সঙ্গে এসএসবি জওয়ানরা দৌড়ে গাড়িতে উঠে, তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে যান। ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি তাঁদের পিছু ধাওয়া করেন। পথে একজায়গায় এসএসবি-র গাড়িটিকে ধরেও ফেলেন তাঁরা। কিন্তু, এসএসবি জওয়ানরা ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি গৌতম মিত্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এখান থেকে ধৃত কম্যান্ডিং অফিসারকে নিয়ে জওয়ানরা চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার পারুলে, এসএসবি-র ক্যাম্পে। ক্যাম্পের বাইরে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন এসএসবি জওয়ানরা। ক্যাম্পের ভিতরে খুনে অভিযুক্ত এসএসবি কম্যান্ডিং অফিসার। বাইরে দাঁড়িয়ে ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি, ডায়মন্ডহারবারের এসডিপিও, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

সকাল পৌনে বারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চলে টানাপোড়েন। শেষমেশ প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার এসপি কোটেশ্বর রাও সেখানে গিয়ে এসএসবি-র সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। এরপরই ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আত্মসমর্পণ করেন খুনের অভিযোগে ধৃত এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার দীপককুমার সিংহ। এরপর তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনায় রাজ্য প্রশাসন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এভাবে ওরা রাজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মাও জানিয়েছেন, আইজি এসএসবি-র সঙ্গে কথা বলেছি। এসএসবি এটা করতে পারে না। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।
ধৃত কম্যান্ডিং অফিসারের পাশে দাঁড়াননি এসএসবি-র শীর্ষকর্তারাও। এসএসবি-র আইজি শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই কম্যান্ডিং অফিসার ঠিক কাজ করেননি। আমরা বিষয়টি সমর্থন করছি না। ঘটনাটি জানতাম না। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়। জানতে পেরেই ওই কম্যান্ডিং অফিসারকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিই। আমরা দেশের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলার পক্ষে। আধিকারিকদের এলাকায় পাঠিয়েছি। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে।
এসএসবি-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তারাও। এসএসবি-র ধৃত কম্যান্ডিং অফিসার পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি এক ব্যক্তির কাছে কালো টাকা রয়েছে বলে খবর পেয়ে অভিযান চালান। কিন্তু, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তাদের মতে, এরকম খবর পেলেও এসএসবি এভাবে অভিযান চালাতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাঁদের বিষয়টি জানানোর কথা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা রাজ্য পুলিশকে। অথচ, এক্ষেত্রে ডায়মন্ডহারবার থানাকে কিছুই জানানো হয়নি।

এসএসবি জওয়ানরা যেভাবে থানা থেকে খুনে অভিযুক্ত কমান্ড্যান্টকে ছিনতাই করেছেন, তাতে ক্ষুব্ধ রাজ্য পুলিশ। তাদের বক্তব্য, কোনও সমস্যা থাকলে পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে এসএসবি-র আলোচনা করা উচিত ছিল। এসএসবি-র মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনীর কাছে এভাবে অভিযুক্ত ছিনতাই কখনওই কাম্য নয়। নবান্ন সূত্রে দাবি, এই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য।
এদিন যে এসএসবি কম্যান্ডিং অফিসারকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের মতো গুরুতর অভিযোগ। মূল ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার।দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষাহাটে এক কেবল অপারেটরের অফিস থেকে উদ্ধার হয় আলতাব জমাদার নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ।
পুলিশ সূত্রে দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার আলতাবের সঙ্গে দেখা করতে যান এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার দীপককুমার সিংহ এবং অমিতাভ প্রামাণিক নামে এক জওয়ান। তখন সেখানে ছিলেন কেবল অপারেটর অফিসের মালিক মোজাম্মেল মণ্ডলও।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতরা দাবি করেছে, তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, আলতাব ও মোজাম্মেলের কাছে বাতিল নোটে ৯ কোটি টাকা রয়েছে। বাতিল নোট নতুন নোটে বদলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আলতাবের কাছে যান এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার ও জওয়ান।
নতুন নোটে ২ লক্ষ টাকা তাঁরা আলতাব ও মোজাম্মেলকে দেন। কিন্তু, বাতিল নোটের নামে আলতাবরা যা দেন, তা খেলনা নোট ছিল বলে অভিযোগ। এই নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। পুলিশ সূত্রে দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, বচসার মাঝে আলতাব বন্দুকের বাঁট দিয়ে এসএসবি-র কম্যান্ডিং অফিসার দীপককুমার সিংহকে আঘাত করলে তিনি গুলি চালিয়ে দেন। তাতেই মৃত্যু হয় আলতাবের।
ঘটনায় ধৃত এসএসবির কম্যান্ডিং অফিসার ও জওয়ানের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। ছিনতাইকাণ্ডের পর খুনের চেষ্টা, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে মারধর, অভিযুক্ত ছিনতাই, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়েছে।