কলকাতা: রাজ্য সরকারের বাজেট বক্তৃতা ঘিরে বেনজির সংঘাতের আশঙ্কা! রাজভবন সূত্রের খবর, বাজেট বক্তৃতায় কিছু সংযোজন-বিয়োজনের যে প্রস্তাব রাজ্যপাল দিয়েছিলেন, তা খারিজ করেছে রাজ্য। রাজভবন সূত্রেই খবর, রাজ্যপাল জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী তিনি বিষয়টি দেখবেন।
সরকারের তৈরি বাজেট ভাষণে কিছু সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন রাজপাল। কিন্তু, রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, তাদের পাঠানো বাজেট বক্তৃতার খসড়াই চূড়ান্ত। যার ফলে রাজভবন-সরকার সংঘাত আরও জোরাল হল? সেইসঙ্গে আরও জোরালভাবে প্রশ্ন উঠে গেল, তাহলে কি কেরল বিধানসভার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে বাংলার বাজেট অধিবেশনেও?
আজ রাজ্যের বাজেট অধিবেশন। প্রথা অনুযায়ী বাজেট অধিবেশনের সূচনা হয় রাজ্যপালের ভাষণের মধ্যে দিয়ে।
সেই বক্তৃতা লিখে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। যেমন কেন্দ্রে বাজেট অধিবেশনের সূচনায় রাষ্ট্রপতির ভাষণ লিখে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
সূত্রের খবর,রাজ্য সরকারের দেওয়া বক্তৃতার খসড়া পড়ে দেখেন রাজ্যপাল, তারপর সরকারকে তা নিয়ে নিজের মতামতও জানান। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেছেন, ‘সরকার রাজ্যপালের ভাষণের মাধ্যমে নিজের নীতি বলতে পারে। কিন্তু আমিও আমার প্রস্তাব দিতে পারি। আমি সরকারের ভাষণ পাঠ করব, কিন্তু নিজের প্রস্তাবও দেব। আমার ভাষণে সরকারের বক্তব্যের উপর টিপ্পনী থাকবে। প্রয়োজনীয় অংশে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও মতামতও জানাব।’’
এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাজভবনের তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়,রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণের কয়েকটি অনুচ্ছেদে সংযোজন-বিয়োজন ও পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু, সরকার জানিয়েছে, তারা ভাষণের খসড়া ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছে, আর সেটাই চূড়ান্ত।
এর প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি সংবিধান অনুযায়ী এই বিষয়টি দেখবেন। রাজ্যপাল সবসময় অত্যন্ত কড়াভাবে সংবিধান মেনে চলেন। তিনি এও জানিয়েছেন, তিনি কখনও ‘লক্ষ্মণরেখা’ পার করবেন না এবং সংবিধানে বর্ণিত সংস্থান থেকে সরে আসবেন না।
অর্থাত্‍, ফের একবার নজিরবিহীন সংঘাতের মুখে রাজ্যপাল ও সরকার! এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভের সুর তৃণমূলের অন্দরে। শাসক দলের অভিযোগ, রাজ্যপাল ইচ্ছাকৃতভাবে রাজ্য সরকার ও রাজভবনের মধ্যে সমস্যা তৈরি করছেন।


শাসক শিবির থেকে কটাক্ষের তীর উড়ে এলেও, তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না রাজ্যপাল। এই প্রেক্ষাপটেই তাঁর আরও দাবি, শুক্রবার তাঁর বাজেট-ভাষণের মাধ্যমে তৈরি হবে নতুন ইতিহাস।
এ প্রসঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষ বলেছেন, ওনার (রাজ্যপাল) কাছে এটা ঐতিহাসিক দিন হতে পারে, আমার কাছে নয়। আমরা বিধানসভার রীতিনীতি, সংবিধান মেনে চলব। আশা করি উনিও বিধানসভার রীতিনীতি, সংবিধান মেনে চলবেন।
সম্প্রতি বাম শাসিত কেরল বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে, নিজের ভিন্নমত উল্লেখ করেই, রাজ্য সরকারের তৈরি করা ভাষণ পাঠ করেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান।
সেদিন, সিএএ-র বিরোধিতা সংক্রান্ত অংশ পাঠ করার আগে কেরলের রাজ্যপাল উল্লেখ করেন, এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি সহমত নন।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন। প্রকাশ্যে বিবৃতিও দিয়েছেন। তিনিও কি কেরলের রাজ্যপালের রাস্তাতেই হাঁটবেন? ভাঙবেন চিরাচরিত প্রথা? নাকি রাজ্যপালের পরামর্শ মেনে বাজেট-বক্তৃতায় সংয়োজন-বিয়োজন করবে রাজ্য সরকার? জল্পনা তুঙ্গে।