আর কখনও মা বলে ডাকবে না ছেলে। আর কখনও সে ফিরবে না। তার এমন পরিণতির জন্য যারা দায়ী, তাদের চরম শাস্তি দাবি করেছেন মা।
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ধরা পড়েছে। তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদেরও গ্রেফতারের দাবিতে সরব মৃত ছাত্রের পরিবার।
ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডির হাতে। সিআইডি সূত্রে খবর, তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরুও করে দিয়েছেন দিয়েছেন গোয়েন্দারা। তথ্য প্রমাণ যাচাই করার জন্য জেরা করা হবে তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিক সহ ধৃত ৬ জনকে। তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের জন্য তদন্তকারীরা যাবেন ঘটনাস্থলেও।
এর আগে, কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতে আনা হয় ছাত্র খুনে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিক ও তাঁর সহযোগী বিল্লুকে। আদালত চত্বরে তখন উড়চে পড়ছে গ্রামবাসী ও নিহত ছাত্রের পরিজনদের ভিড়ে। মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করা দুই ধৃতকে। শুরুতেই ডায়মন্ডহারবার আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ চক্রবর্তী বিচারককে জানান, বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমরা কেউ অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করব না।
এরপর সরকারি আইনজীবী বলেন, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তাপস মল্লিক। তাঁর সামনই গোটা ঘটনা ঘটেছে। তাপস মল্লিক ও তাঁর সহযোগী বিল্লুকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হোক। এরপর ধৃতদের ১৩দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ইতিমধ্যে তাপস মল্লিকের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে আশ্রয় দানের অভিযোগে মামলা হয়েছে তৃণমূল নেতার সহযোগী বিল্লুর বিরুদ্ধেও।
এদিকে, শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলার আগে ডায়মন্ডহারবার থানায় বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী ও নিহত ছাত্রের পরিজনরা। তাঁদের দাবি, মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং কোনও ভাবেই যেন প্রভাব খাটিয়ে, অভিযুক্তরা যেন জেল থেকে বেরোতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কড়া পদক্ষেপের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বন্ধুদের সঙ্গে ডায়মণ্ডহারবারে মাসির বাড়ি বেড়াতে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের বাসিন্দা কৌশিক পুরকায়স্থ। ওই দিনই এলাকায় একটি মোষ চুরি হয়। রাতের দিকে কৌশিক বাড়ি থেকে বেরোলে তাঁকেই চোর সন্দেহে ঘিরে ধরে স্থানীয় কিছু লোকজন। অভিযোগ, টেনেহিঁচড়ে ওই কলেজ ছাত্রকে স্থানীয় একটি ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তাপস মল্লিকের নেতৃত্বে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারের চোটে সংজ্ঞা হারান কৌশিক।
নৃশংসতার শেষ এখানেই নয়! পরিবারের দাবি, মারধরের খবর পেয়ে তাঁরা যখন ক্লাবে যান, দেখেন, মৃতপ্রায় কৌশিক মেঝেতে পড়ে রয়েছে! অভিযোগ, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে পাল্টা দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য! শেষমেশ মুচলেকা দিয়ে রেহাই মেলে! বহু লড়াইয়ের পর কৌশিককে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, শেষরক্ষা হয়নি! এসএসকেএমে মৃত্যু হয় তাঁর।
ওই ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করলেও গতকাল পর্যন্ত অধরা ছিল অন্যতম অভিযুক্ত এই তৃণমূল নেতা।