কলকাতা: আলোর উত্‍সবের রাতেই বাংলার রাজনীতিতে অন্ধকার। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। গতকাল রাত ৯টা ২২-এ এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে পার্ক সার্কাসের (Park Circus) পিস ওয়াল্ডে (Peace World) রাখা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) মৃতদেহ। আজ সকাল ১০টা নাগাদ সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্র সদনে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো, রবীন্দ্রসদনে (Rabindra Sadan) শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা থাকবে মরদেহ। দুপুর ২টোয় রবীন্দ্রসদন থেকে গন্তব্য বিধানসভা (West Bengal Legislative Assembly)। প্রয়াত নেতার মৃতদেহ বিধানসভা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বালিগঞ্জের (Ballygunge) বাড়িতে।  এরপর কেওড়াতলা শ্মশানে (Keoratala Burning Ghat) হবে শেষকৃত্য। 


বঙ্গ রাজনীতির সবচেয়ে বর্ণময় চরিত্রদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ছয়ের দশকের শেষের দিকে যাঁদের হাত ধরে বাংলার ছাত্র রাজনীতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৭১ সালে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০২১ সালে শেষবার। অর্থাৎ, ৫০ বছরের পরিষদীয় রাজনৈতিক জীবন। জীবনে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে লড়েই জয়ী হয়েছিলেন সুব্রত। আর দ্বিতীয়বার বিধায়ক হয়েই মন্ত্রী। রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডও এখনও সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরই ঝুলিতে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে। প্রথম মন্ত্রী হন ১৯৭২ সালে। তখন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ৩৯ বছর পর ২০১১ সালে ফের মন্ত্রী হয়ে মহাকরণে প্রবেশ। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


জেলা থেকে কলকাতায় পড়তে আসা। বঙ্গবাসী কলেজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে আলাপ৷ তারপর, কংগ্রেসের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। প্রিয়-সুব্রত-সোমেন... একসুরে তখন উচ্চারিত হত এই তিনটি নাম। ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পাঁচ দশকেরও বেশি রাজনৈতিক জীবনে সবসময় বামেদের উল্টোদিকে লড়াই করেছেন।


সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে যদি কিছু অপূর্ণ থেকে থাকে, তাহল সাংসদ হিসাবে সংসদে প্রবেশ করতে না পারা। ২০০৯ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন। ২০১৯ সালেও সেই বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকেই তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের কাছে পরাজিত হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় চলে যাওয়ায়, সাতের দশকে বঙ্গ রাজনীতির তিন দামাল ছেলের সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।


আরও পড়ুন: 'বাংলা কংগ্রেসের ত্রিমূর্তি প্রিয়-সুব্রত-সোমেন কেউ রইলেন না' সুব্রত-প্রয়াণে স্মৃতিচারণ অধীরের