কলকাতা:  রাজ্য রাজনীতিতে ফের চমক। যাঁর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তীব্র, সেই শুভেন্দু অধিকারীই বৈঠকে বসলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে। সেই পিকে ও অভিষেকের সঙ্গে বসলেন প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী, যাঁদের নাম না করেই বারবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বক্তব্যে, ভাষণে। অন্যপক্ষ থেকেও নাম না করে এসেছে আক্রমণ। তবু মঙ্গলবার দিনের শেষে রাজ্যরাজনীতির সবটুকু আলো কেড়ে নিল এই বৈঠক। আগামী ২১ শের ভোটের অনেক কিছু নির্ভর করছে এই মুখোমুখি বসার ফলের উপর। মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উপস্থিত রইলেন দুই বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠক শেষে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ দাবি করলেন, তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী। সব সমস্যা মিটে গিয়েছে।

শুভেন্দুর ভবিষ্যত রাজনৈতিক পদক্ষেপ ঘিরে জল্পনাটা তৈরি হয়েছিল একটা মন্তব্যকে ঘিরে। ভরা সভার শুভেন্দু বলেছিলেন, 'আমি প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও চড়িনি, ধাপে ধাপে এই জায়গায় পৌঁছেছি'। নাম না করে যার জবাব দেন অভিষেকও। তিনি বলেন, 'লিফটে চড়লে ৩২টা পদ পেতাম, প্যারাসুটে নামলে দক্ষিণ কলকাতায় লড়তাম। পার্টি চেয়েছিল, তাই ডায়মন্ডহারবার থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম'।

এরইমধ্যে আবার গনগনে আগুনে ঘি ঢেলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন মদন মিত্র। তিনি বলেন, ক্যাপসুল লিফট  বাড়িতে নেই। আর কথায়-কথায়  চপারে চড়ার অভ্যেসও নেই। কামারহাটির মানুষকে কাছে পেতে পিকের পরামর্শ নিতে হবে?

এরপর তৃণমূলের ব্যানার-পতাকা ছাড়াই একের পর এক অরাজনৈতিক সভা করেন শুভেন্দু। জেলায় জেলায়, হাড় থেকে জঙ্গলমহল, দাদার অনুগামীদের নামে পোস্টার পড়ে! এরপর গত ১০ নভেম্বর, নন্দীগ্রাম দিবসে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি এবং তৃণমূলের ব্যানারে জোড়া কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত চরমে ওঠে। এরমধ্যেই গত শুক্রবার ৩ দফতরের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন শুভেন্দু।

সবকিছুই অন্য রকম বার্তা দিচ্ছিল! রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দুকে ঘিরে বইতে শুরু করেছিল। এই আবহেই মঙ্গলবার রাতের বৈঠক। শুভেন্দু-অভিষেক-প্রশান্ত কিশোরের মুখোমুখি বৈঠকে আশাবাদী তৃণমূল সাংসদ তথা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারীও। দিনের শেষে সুর নরম কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর তাঁকে কার্যত দু’হাত খুলে দলে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিজেপি। শুভেন্দু শেষ অবধি তৃণমূলে থেকে গেলে, তা কি ভোটের মুখে গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় ধাক্কা হবে? প্রকাশ্যে এমনটা মানতে নারাজ বিজেপি। এরইসঙ্গে এখনও ‍শুভেন্দু প্রসঙ্গে আশাবাদী তারা। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, অভিষেককে নিয়ে শুভেন্দুর আপত্তি ছিল। মনে করি শুভেন্দু মাথা নোয়াবেন না।

কথায় বলে, রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। তাই ম্যাচ  যে কোনও মুহূর্তেই  ঘুরে যেতে পারে।