সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: ভোট মিটতেই দলের প্রয়াত বিধায়ককে ভুলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপির শহিদ স্মরণ কর্মসূচির প্রাক্কালে এই অভিযোগে সরব হল হেমতাবাদের প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়কের পরিবার ও দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। ক্ষোভ সামাল দিতে সাফাই দিয়েছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। 


একুশে জুলাই তৃণমূলের পাশাপাশি শহিদ দিবস পালনের তোড়জোড় সেরে ফেলেছে বিজেপি। তার ঠিক আগে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে শহিদ স্মরণ ইস্যুতে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল  বিজেপিরই একাংশ। অভিযোগ, ভোট মিটতেই বিস্মৃতির অতলে দলের প্রয়াত বিধায়ক। 


নিচুতলার নেতাকর্মীরা শুধুই খেলনা। হেমতাবাদের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি প্রাণ বর্মনের অভিযোগ, জেলা রাজ্য কেন্দ্র কেউই আর আমাদের আগের মতো দেখছে না। দেবেন রায়ের মৃত্যুর পর দল যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এখন আর সেই সহানুভূতি নেই। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নীচুতলার বিজেপি নেতা কর্মীদের খেলনা মনে করে ব্যবহার করে। হেমতাবাদের প্রয়াত বিজেপি বিধায়ক দেবেন রায়কে ভুলেই গিয়েছেন তারা। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখে না।


হেমতাবাদের বালিয়া মোড় এলাকার নাম বদলে হয়েছে দেবেন মোড়। ২০২০ সালের ১৩ জুলাই এই এলাকায় একটি বন্ধ দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার হয় হেমতাবাদের তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ। বিধানসভা ভোটের আগে তা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। খুনের অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয় বিজেপি। অমিত শাহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় হেমতাবাদে যান।  


প্রয়াত বিজেপি বিধায়কের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয় শীর্ষ নেতৃত্ব। গত বছর ২৯ অগাস্ট বালিয়া মোড়ে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তারপর বছর ঘুরে গেলেও মূর্তি এখনও বসেনি। ক্ষুব্ধ প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়কের পরিবার। 


প্রয়াত দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ভাইপো ধনেশ্বর চন্দ রায়ের কথায়, কাকু মারা যাওয়ার পর জেলা রাজ্য কেন্দ্রের সব নেতারা এসেছিলেন। কদিন আগে মৃত্যুবার্ষিকী গেল। কিন্তু কেউ এল না। আস্তে আস্তে সবাই ভুলে যাচ্ছে।


উত্তর দিনাজপুরের  বিজেপি সভাপতি বাসুদেব সরকার জানান মূর্তি তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তার ওপর চলছে লকডাউন। ফলে এটা তৈরি হতে সময় বেশি লাগছে। মূর্তিযখন বসানো হবে বলা হয়েছে, মূর্তি বসবেই। যিনি আমাদের দলের একথা বলেছেন, তিনি হয়তো সিস্টেমটা জানেন না,তাই বলে ফেলেছেন।


এই ঘটনায় বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল নেতা অরিন্দম সরকারের পাল্টা অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে এই বিজেপি সরকারই বলেছিল জিনিসের দাম কমবে, এখন বাড়ছে। তা নিয়ে ভাঁওতা। তা এতো সামান্য মূর্তি। সেখানেও নিজের লোকেদেরই ভাঁওতা দিচ্ছে দল। সব মিলিয়ে বিজেপির একুশের শহিদ স্মরণের আবহে হেমতাবাদ এখন বেসুরো।