পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: লাল মাটির জেলা বাঁকুড়া। সেখানকার একটা বড় অংশের মানুষের এখন অন্যতম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলমার দাঁতালদের উৎপাত। গত কয়েক বছরে পরিযায়ী হাতিদের আনাগোনার সংখ্যা বেড়েছে জেলায়। এমনকী বাঁকুড়ার উত্তরাংশের জঙ্গলে বেশ কিছু হাতির একাধিক দল স্থায়ীভাবে ঘাঁটিও তৈরি করেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


হাতির আক্রমণে দিশেহারা বাঁকুড়ার বড়জোড়ার একটা বড় অংশের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে দাঁতালে উপদ্রবে আতঙ্কে জয়পুর, কোতুলপুর, বিষ্ণুপুরের জঙ্গল লাগোয়া অঞ্চলের মানুষজনও। গজরাজের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বাঁকুড়ার দক্ষিণের জঙ্গলমহল এলাকার রায়পুর, রানিবাঁধ ও সারেঙ্গার একটা অংশের কৃষিজীবি মানুষও। হাতির দাপটে নষ্ট হচ্ছে ফসল। জমির ফসল খেয়ে, নষ্ট করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। সেই সঙ্গে হাতির হানায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমশ। এই পরিস্থিতিতে বেশ চিন্তায় বন দফতরও। 


হস্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবারের পরিমাণ কমছে। ফলে লোভনীয় খাবারের সন্ধানে দলমা থেকে এই রাজ্যে আসছে হাতির দল। তাঁদের মতে, এদের তাড়া করে ফেরত পাঠানো খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। কিছু বছর আগেও ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে সীমিত সংখ্যক নির্দিষ্ট সময়ে বাঁকুড়ায় এসে পৌঁছত। মাত্র মাস চারেক থাকার পর ফের তারা দলমায় ফিরে যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন প্রায় গোটা বছর ধরেই ভিন রাজ্য থেকে হাতি আসতেই থাকে। পরিস্থিতি এমন যে একদিকে বন দফতর একদল হাতিকে ফেরত পাঠালে আবার পরদিনই অপর এক দল হাতি এসে উপস্থিত হচ্ছে। বন দফতর সূত্রে খবর আপাতত একটি হাতি উত্তর বাঁকুড়ার বনবিভাগের মধ্যেই রয়েছে। বেলিয়াতোড়, গঙ্গাজলঘাঁটি, সোনামুখী এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই দাঁতাল, কখনও জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে। গ্রামের আইসিডিএস সেন্টারের চালডাল মজুত থাকে যে ঘরে সেখানকার দরজা, জানালা ভেঙে চালডাল খেয়ে ফেলছে। গ্রামের একাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলেছে। বন দফতর থেকে বারবার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি ওই হাতিগুলিকে অন্য কোনও জঙ্গলে রাখা হোক। অথবা বন দফতরের পক্ষ থেকে জঙ্গলেই হাতিগুলির জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হোক। বন দফতরের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, হাতির দল দলমা থেকে বাঁকুড়ার জঙ্গলের দিকে আসতে শুরু করলেই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোয় মাইকিং করে গ্রামবাসীদের সচেতন করা হয়। হাতিদের গতিবিধিও মনিটর করা হয়, নজর রাখা হয়। 


হাতির হানায় প্রাণ গেছে একাধিক মানুষের। ২০২০-২০২১ সালেই হাতির তাণ্ডবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে দু'জন উত্তর বন বিভাগ এলাকার বেলাতোড়ের বাসিন্দা ও একজন সোনামুখীর বাসিন্দা। রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী হাতির হানায় এ পর্যন্ত মৃতদের পরিবারের প্রায় ৮৬ জনকে বিভিন্ন দফতরে চাকরি দেওয়া হয়েছে। রেঞ্জ অফিসার মহিবুল ইসলাম জানাচ্ছেন, জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার ও জল না মেলায় হাতির দল লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। জনবসতিতে খাওয়া-দাওয়া করে ফিরে যাচ্ছে জঙ্গলে। বন দফতরের তরফ থেকে হাতিদের খাবারের যে সমস্ত গাছ, শাল, বাঁশ ইত্যাদি গাছ আছে সেগুলোর পরিমাণ জঙ্গলের মধ্যে বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাহায্য করছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও। জঙ্গলে জলেরও ব্যবস্থা করা সহ আরও একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।