কলকাতা: রাজ্যপাল ও রাজ্যের শাসক দলের বেনজির সংঘাত। রাজ্যপালকে জৈন হাওয়ালাকাণ্ডে অভিযুক্ত বলে সোমবার যে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, এদিন তাতে নতুন মাত্রা যোগ করল তাঁর দল।
মঙ্গলবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি তালিকা সামনে আনা হয়। তালিকার একেবারে শেষে নীচে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ধনকড়। তালিকায় ধনকড় শব্দের পাশে লেখা রয়েছে ৫.০০।
কাগজটিকে জৈন হাওয়ালাকাণ্ডের ডায়েরির একটি পাতা বলে দাবি করছে তৃণমূল। যদিও কাগজে থাকা ধনকড় এবং রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল একই ব্যক্তি কিনা তা স্পষ্ট নয় তৃণমূলের কাছেও।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, হাওয়াকণ্ডের যে জৈন ডায়েরি, তাঁর একটি পাতা, তাতে সর্বশেষ নাম যেটা রয়েছে, ধনকড়। এবং তাঁর নামের পাশে লেখা ৫। যখন মামলা চলছিল, তখন অনেক রাজনৈতিক নেতার নাম ছিল, লক্ষ লক্ষ টাকার উৎকচ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার মধ্যে ধনকড়ের নাম। সেই ধনকড় আর এই রাজ্যপাল এক ব্যক্তি কিনা তা বলা সম্ভব নয়। সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ বলছেন, এই জগদীপ ধনকড়ই টাকা নিয়েছিলেন।
পাল্টা কটাক্ষ করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্যপালকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁকে বারবার অপমানিত হতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, তাঁর পারিষদ বলে দশ গুণ, এই কি সংস্কৃতি?
সোমবার জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে শুধু জৈন হাওয়ালাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ তুলেছে তাঁর দল।
সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, হাওয়ালার ফান্ডিং হয়েছিল দুবাই, লন্ডন থেকে। হিজবুল মুজাহিদিন সন্ত্রাস চালাতে এই টাকা পাঠিয়েছিল, নেতাদের উৎকচ দিতে। প্রশ্নোত্তর পর্বে - দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এরকম লোকেরাও যদি রাজ্যপালের পদে চলে আসে, সেটা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।
এই প্রেক্ষিতে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, সুখেন্দুশেখর ঢপ মারে, রাজ্যপালের মতো লোকের বিরুদ্ধে এসব কথা বলেন। রাজ্যপাল ওর মতো ছোটখাট আইনজীবী নন।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর তোলা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজ্যপাল। জগদীপ ধনকড় বলেছিলেন, আমি কোনও আদালত থেকে অব্যাহতি চাইনি। কারণ আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই ছিল না।
যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূল। সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, এটার ট্রায়ালই হয়নি, রেহাই মেলারও কোনও প্রশ্ন নেই।
গতকাল রাজ্যপাল বলেছিলেন, হাওয়ালা চার্জশিটে অজিত পাঁজা, যশবন্ত সিনহার নাম ছিল। সেটাও মমতার দেখা উচিত।
এদিন সুখেন্দুশেখর বলেন, আমরা এই তালিকায় ওদের নাম দেখতে পাচ্ছি না। তবে আডবাণী, প্রমোদ মহাজনের নাম রয়েছে। তিনি যোগ করেন, ১৯ জুলাই, সংসদে অধিবেশন শুরু হবে। তখন নিয়ম মেনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা যায় দেখব।
এপ্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, যেখানে ইচ্ছা করুন, করার অধিকার আছে। সুখেন্দুশেখরের থেকে রাজ্যপালও কিছু সংবিধান কম জানেন না।
সব মিলিয়ে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত যেন থামার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না।